শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: চৈত্রে দক্ষিণবঙ্গে হাঁসফাঁস দশা। উত্তরবঙ্গে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। লণ্ডভণ্ড জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। মৃত অন্ততপক্ষে ৪। জখম শতাধিক। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ময়নাগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসা। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও ভর্তি রয়েছেন অনেকেই। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ঘটনায় X হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার বিকেল তিনটা নাগাদ ভূপৃষ্ঠ থেকে শূন্যে হাতির শুঁড়ের মতো পাকা খেয়ে ওই ঝড় খড়কুটোর মতো ঘরবাড়ি। পেল্লায় গাছ উড়িয়ে নিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ময়নাগুড়ির রাজারহাট, বার্নিশ, বাকালি, জোরপাকড়ি, মাধবডাঙা, সাপ্টিবাড়ি গ্রামে। প্রচুর পাকাবাড়ি ধসেছে। চাল উড়েছে কয়েক হাজার বাড়ির। গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে এখানে জখম শতাধিক। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের নাম দ্বীজেন্দ্রনারায়ণ সরকার (৫২) এবং অনিমা বর্মন (৩০)। দ্বীজেন্দ্রনারায়ণ মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা। ঝড়ের সময় তিনি জলপাইগুড়ি শহরের সেনপাড়ার কাছে গাছের তলায় আশ্রয় নেন। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ডেঙ্গুয়াঝাড় এলাকার বাসিন্দা অনিমাদেবীও ভেঙে পড়া গাছের ডালের চাপায় মারা যান। জলপাইগুড়ি শহরের একাধিক ওয়ার্ড, চা বাগান এলাকাও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। নষ্ট হয়ে ফসল। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিস্তীর্ণ এলাকা।
[আরও পড়ুন: নিঃসন্তান মহিলাকে দিনরাত গঞ্জনা! শাশুড়িকে ‘খুন’ করে আত্মসমর্পণ গৃহবধূর]
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ঘন্টায় অন্তত ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকায়। ঝড়ের পাশাপাশি ছিল শিলাবৃষ্টির দাপট প্রায় দুশো গ্রাম ওজনের শিল পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি। বিঘার পর বিঘা ভুট্টা, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, টম্যাটো, লঙ্কা খেত তছনছ হয়েছে। শিলের আঘাতে জখম হয়েছেন প্রচুর পথচারী। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, "দু'দিন আগে থেকে ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে। সেটাই হলো। ডুয়ার্সেও শিলাবৃষ্টির খবর মিলেছে।" এদিনের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রাবাসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শিবিরের একাংশ। সেখানে টিনের চাল উড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ি। বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা বিকেলের পর৷ অন্ধকারে ডুবেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উপড়ে পড়া গাছ কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও উদ্ধার কাজে নেমেছেন।