তরুণকান্তি দাস: যৌনতা আর বিকোচ্ছে না। খাচ্ছে না সেক্স টুরিজম। তাই হাওয়া বদলের হাওয়া থাইল্যান্ড পর্যটনে।
কলকাতায় পর্যটন উৎসবে যোগ দিয়ে সেখানকার কর্তারা জোর দিলেন ক্র্যাবি, ফি-ফি, সামুই, হুয়া-হিনের মতো দ্বীপ, মায়ানমার সীমান্তের চিয়াং মাইয়ের মতো আদিবাসী গ্রামের সংস্কৃতি তুলে ধরায়। ভুলেও বললেন না পাটায়ার নগ্নতা বা ফুকেটের বাংলা রোডের নাইটলাইফের কথা৷ যার জোরে থাইল্যান্ড সরকার ভরপুর ডলার কামাচ্ছে গত কয়েক বছর। স্বাভাবিক। নয়া ‘লাস ভেগাস’ হয়ে ওঠার সৌজন্যে পাটায়া ও ফুকেট বিদেশি পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। তাকেই কিনা খরচের খাতায় ফেলে তুলে আনা হচ্ছে একেবারে অখ্যাত কো চ্যাং, সাতুন, কাঞ্চনাবুড়ির মতো এলাকাগুলোকে। যৌনতার পসরা সাজিয়ে বসা দেশটার পর্যটন কর্তাদের হলটা কী?
[যাদবপুরে প্রবেশিকা পরীক্ষার দিনবদল? সোমবার জারি হতে পারে বিজ্ঞপ্তি]
নেতাজি ইন্ডোরের পর্যটন উৎসবে যোগ দেওয়া পর্যটন অফিসার প্রথমে ভাঙবেন তবু মচকাবেন না ভাব নিয়ে একের পর এক ব্রোশিওর হাতে তুলে দিলেন। তারপর চাপের মুখে খোলসা করলেন বিষয়টা। মানলেন, যৌনতা আর তেমন খাচ্ছে না। তার চেয়ে বড় কথা হল, সেক্স টুরিজম পাটায়া ও ফুকেটকে আর্থিকভাবে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে তা ঠিক কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকার থেকে গিয়েছে যে। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তাই কৌশলগত পরিবর্তন সরকারের। কিন্তু কলকাতা কেন?
উত্তরটা সহজ। দমদম বিমানবন্দর থেকে গত তিন-চার বছর কোনও বিমান একটাও আসন ফাঁকা রেখে ব্যাংকক রওনা হয়নি। বর্ষাকালে তবু সামান্য ভাটা থাকে। কিন্তু উৎসবের মরশুমে সব বিমান ভরা তো বটেই আসন পেতে অনেক সময় মাথার চুল ছেঁড়ার জোগাড় হয়। বিশেষ করে এখন কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিজনেস প্রমোশনাল টুর মানেই থাইল্যান্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। একরাত ব্যাংকক, দুই রাত পাটায়া বা ফুকেট, মোটামুটি এটাই চালু প্যাকেজ। ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও বিজনেস গ্রুপের গন্তব্য সেই পাটায়া। ওয়াকিং স্ট্রিট, রাশিয়ান নু্ড শো ঘিরে উল্লাস। কিন্তু সেখানে ক্র্যাবি, ফি-ফি, হুয়া-হিন তো ব্রাত্য। এমনিতে এই সব জায়গার আকর্ষণ সাংঘাতিক কিছু নয়। তেমন প্রচার নেই। ফলে পর্যটনকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। ফুকেট-পাটায়ার যৌনতা আর তেমন বিকোচ্ছে না। সেই স্রোতে ভাটা। তথ্য বলছে, পাটায়ার হোটেলগুলিকে ভাড়া কমাতে হয়েছে। যে সব অ্যাপার্টমেন্ট সপ্তাহভর ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা থাকতেন সেগুলি মাছি তাড়াচ্ছে। সেখানে হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা করা ভারতীয়, বিশেষ করে পঞ্জাবের মানুষ ক্ষতির মুখে। ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা হরিন্দর সিং বলেছেন, “এখানে হঠাৎ যেন ভাটার টান। রেস্তোরাঁ তো বটেই, নাইটলাইফেও ছন্দপতন ঘটেছে। নাইট ক্লাবে ভিড় কোথায়?” পর্যটন দফতরের প্রতিনিধি সু চি রা পলছেন, “তাই আমরা অভিমুখ ঘোরাতে চাইছি। মানুষ আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, প্রকৃতি জানুক, চিনুক।”
[শহরে বড়সড় ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁস, বর্ধমান ও ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার ৪]
গত বছর কলকাতায় থাইল্যান্ড খাদ্য উৎসবের আয়োজন করেছিলেন এখানকার কনসাল জেনারেল। লক্ষ্য ছিল খাদ্যরসিক বাঙালিকে রসনাতৃপ্তির লোভ দেখিয়ে ব্যাংককমুখী করা। কিছুটা লাভ হয়েছিল। এবার কলকাতা পর্যটন উৎসবে তুলে ধরা হল জুলাইয়ে পাটায়া ম্যারাথন, আগস্টে আ্যং থং—য়ে আন্তর্জাতিক ড্রাম ফেস্টিভ্যাল। যেখানে আমন্ত্রিত ভারতের বিখ্যাত পার্কাসনিস্ট শিবমণি। সেপ্টেম্বরে নারাথিওয়াতে চারদিনব্যাপী বোট রেসিং, যেখানে থাকবে কেরলের টিম। অর্থাৎ ভারতকে জড়িয়ে বেঁচে থাকতে চাইছে থাইল্যান্ড। এবং সেই নয়া ভেঞ্চারে পাটায়ার যৌনতা বেমালুম বাদ। দেশের পর্যটনের সরকারি ব্রোশিওর থেকেও। এ-ও এক সময়োপযোগী কঠিন বাস্তব।
The post থাইল্যান্ড পর্যটনে অবাধ যৌনতার ছুটি, কৌশলগত পরিবর্তন সরকারের appeared first on Sangbad Pratidin.