সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের কিশোরের মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভ ফ্রান্স (France)। বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ছবির দেশ, কবিতার দেশ। এবার তার আঁচ পড়ল হাই প্রোফাইলদের উপরেও। প্যারিসের দক্ষিণে একটি শহরের মেয়রের বাড়িতে আগুন লাগাল বিক্ষোভকারীরা। শনিবার রাতে প্রশাসনিক প্রধানের বাড়িতে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তাতেই আহত হয়েছেন মেয়রের স্ত্রী ও সন্তান।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। অভিযোগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করে নাহেল এম নামের ১৭ বছরের এক কিশোর। প্যারিসের পাশে অবস্থিত নঁতের অঞ্চলে পৌঁছয় সে। সেই সময় কয়েকজন পুলিশ তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে একজন বন্দুক তাক করে ছিলেন। তারপর সেই কিশোর পালানোর চেষ্টা করলে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করেন সেই পুলিশকর্মী। মৃত্যু হয় কিশোরের। এরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে ফ্রান্স। এবার সেই বিক্ষোভের আগুনে পুড়ল মেয়রের বাড়িও।
[আরও পড়ুন: ৩২০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, বন্ধ হল অস্ট্রিয়ার প্রাচীন সংবাদপত্র ওয়েনার জেইতুং!]
লে-লে-রোসে শহরের মেয়র ভিনসেন্ট জঁব্রু। শনিবার রাতে তাঁর বাড়িতে যখন হামলা হয়, তখন ঘুমিয়ে ছিল পরিবারটি। আচমকা বাড়িতে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁরা মেয়রের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন মেয়রের স্ত্রী এবং এক সন্তান। মেয়র সমাজমাধ্যমে এই ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত খুনের চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেছেন। গোটা ঘটনায় ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অস্বস্তিতে ইমানুয়েল ম্যাক্রো সরকার।
যদিও ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিনের দাবি, যে মাত্রায় হিংসা শুরু হয়েছিল তা কমেছে। অন্যদিকে নতুন করে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে। প্যারিস, লিয়ন এবং মার্সেইয়ের মতো শহরগুলিতে নেমেছে সেনার সাজোয়া গাড়ি, হেলকপ্টার। নাগরিকদের সুরক্ষায় রাস্তায় টহল দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
[আরও পড়ুন: ফের বন্দুকবাজের হানা আমেরিকায়, মৃত অন্তত চার, আহত ২৯]
নতুন করে ৭১৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এখনও অবধি ২০০ সুপার মার্কেট, ২৫০টি তামাকজাত পণ্যের দোকান, ২৫০টি ব্যাংকের শাখায় লুট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মার্সেই শহরের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেশ কিছু আবাসনেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জার্মান সফর পিছিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো।
ফ্রান্সের এই বিক্ষোভের আগুনকে তুলনামূলক কম রোজগেরে মানুষদের প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্য-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে প্রতিবাদীদের। ফ্রান্সের ফুটবল দলের একাধিক তারকা খেলোয়াড়, যাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, তাঁরা শান্তির বার্তা দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতি তাঁদের আবেদন, হিংসা নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।