অভিরূপ দাস: মৃত্যুর ওপারেও যে জীবন থাকে, থাকে অমরত্ব – সাধারণ মানুষকে তা বুঝিয়েছিলেন। মরণের পর দেহ দানের কী অপরিসীম উপকারিতা, তাও সাফল্যের সঙ্গে বুঝিয়েছিলেন। মরণোত্তর দেহ দানে উৎসাহিত করতে রাজ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সংগঠন – ‘গণদর্পণ’। কিন্তু শেষবেলায় দেখা গেল, মৃত্যুর পর নিজের দেহই আর দান করা হল না তাঁর। কারণ, করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। মারণ জীবাণুর কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ‘গণদর্পণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা মরণোত্তর দেহদানের অন্যতম পথিকৃৎ ব্রজ রায়ের। আর সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁর দেহের কোনও অংশই ব্যবহার করা যাবে না। ফলে দেহদান অপ্রাসঙ্গিক – এমনই জানিয়ে দিলেন চিকিৎসকরা। নিজের হাতে তৈরি স্বপ্ন ছুঁতে পারলেন না নিজেই।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, মৃত্যুর পর দেহ দাহ করাই নিয়ম। কিন্তু দাহ নয়, দান করুন – এই বার্তা নিয়ে কয়েক দশক আগে ‘গণদর্পণ’ তৈরি করেছিলেন বছর পঁচাশির ব্রজ রায়। তিনিই বুঝিয়েছিলেন, দেহ না পুড়িয়ে বরং তা দান করলেন মৃতের অন্যান্য অঙ্গে প্রাণ বাঁচবে আরও কয়েকজনের। মৃতের চোখের করনিয়ার মতো বেশ কয়েকটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন যোগ্য হলে তা অন্যকে নতুন জীবন দান করতে পারে। অথবা চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় কাজে লাগতে পারে। এই ভাবনা থেকেই ‘গণদর্পণ’-এর জন্ম। ব্রজ রায়ের ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হন দুই প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিক – জ্যোতি বসু এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। উভয়ের দেহই মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে দান করা হয়েছিল গবেষণার স্বার্থে।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় রেমডেসিভিরের কালোবাজারি, ধৃত ৩, উদ্ধার প্রচুর ওষুধ]
তো এমন এক সাধু উদ্যোগকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ লড়াইটা হেরেই গেলেন ব্রজ রায়। তাঁকে হারিয়ে দিল মারণ করোনা ভাইরাস। গত ৭ তারিখ অসুস্থ হয়ে ব্রজ রায় ভরতি হন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর কোভিড (COVID-19)পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি পজিটিভ। এই জীবাণুর কবলে পড়ে মৃত্যুতে সাধারণত সংক্রমণের আশঙ্কায় দেহ দাহ করা হয়, নিকটজনদের পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয় না। ব্রজ রায়ের দেহও তেমনই হওয়ার কথা। তবে আদৌ কোভিডে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা জানতে দেহ বিশদে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছেন ‘গণদর্পণে’র সদস্যরা।