সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ-যেন বন্দুক আর বুলেটের প্রেম। বলিউডের ধারাল চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। ছবি করলেই গ্যারান্টি হিট। মঙ্গলবার সাতপাকে বাঁধা পড়লেন গ্যাংস্টার সন্দীপ ওরফে কালা জঠেড়ি এবং অনুরাধা চৌধুরী ওরফে ম্যাডাম মিঞ্জ ওরফে রিভলবার রানি। অন্ধকার জগতের দুই হেভিওয়েটের বিয়ে হল দিল্লির দ্বারকা এলাকার একটি ব্যাঙ্কোয়েটে। খুন-অপহরণ-ডাকাতি-তোলাবাজিতে অভিযুক্ত বর-কনের মেলবন্ধনের সাক্ষী নিকট আত্মীয়, ২৫০ জন পুলিশকর্মী। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাবে রাজত্ব করা দুই গ্যাংস্টারের বিয়ের জন্য নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল গোটা এলাকা।
কালা জঠেড়ির আইনজীবী ৫১ হাজার টাকায় ভাড়ায় দ্বারকার সেক্টর থ্রির ব্যাঙ্কোয়াট বুক করেন। এই বিয়েতে সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিলেন কালা নিজেই। খুন-অপহরণ-ডাকাতি-তোলাবাজির মতো একাধিক মামলায় বর্তমানে জেল খাটছেন তিনি। বিয়ের জন্য দিল্লি হাই কোর্টে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন। ৬ ঘণ্টা প্যারোলে মুক্তি দেয় আদালত। সেই অবসরেই প্রেমিকা রিভাল রানির সঙ্গে সামাজিক বন্ধনেও আবদ্ধ হলেন কালা।
[আরও পড়ুন: মাদক পাচারের ঘাঁটি গুজরাট বন্দর! এবার বাজেয়াপ্ত ৪৫০ কোটির ড্রাগস, গ্রেপ্তার ৬ পাকিস্তানি]
গত কয়েক বছরের একাধিক গ্যাংস্টারের প্রকাশ্যে হত্যা দেখেছে দেশ। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে পুলিশি হেফাজতে খুন হয়েছেন গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদ। এদিন দুই গ্যাংস্টারের বিয়েতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রীতিমতো স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করেছিল দিল্লি পুলিশ। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল, স্পেশাল স্টাফ এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চের বিশেষ দল। বিয়ের আসরে অভ্যাগতদের জন্য দেওয়া হয়েছিল বারকোড ব্যান্ড। ব্যাঙ্কোয়েটের কাছে অনুমতি ছাড়া কোনও গাড়িকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। সঙ্গে ছিল আড়াশো পুলিশের পাঁচশো সতর্ক চোখ।
আগেভাগেই কালা জঠেড়ির পরিবারের ১৫০ জন অতিথির নামের তালিকা ছিল নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে। বিয়ের আসরে ওয়েটার ও অন্য কর্মীদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্কোয়েটে ঢোকার মুখে ছিল মেটাল ডিটেক্টর। এইসঙ্গে অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে হাফ ডজনের বেশি সিসিটিভি বসানো হয়েছিল। এমনকী ড্রোন চালিয়ে আকাশপথে নজর রাখা হচ্ছিল।
[আরও পড়ুন: ‘কারও নাগরিকত্ব যাবে না’, CAA সমর্থন করে মুসলিমদের বার্তা জামাত প্রধান রজভির]
একদিকে যেমন কালা এবং রানির বিরুদ্ধ গ্যাংয়ের হামলার আশঙ্কা ছিল, তেমনই সকাল ১০টা থেকে ৪টে অবধি প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কালা যে পালবেন না, তার নিশ্চয়তা ছিল না পুলিশের কাছে। এক সময় ডাকাতি, খুন, খুনের চেষ্টা, তোলাবাজি এবং বেআইনি অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কালার মাথার দাম ছিল ৭ লক্ষ টাকা। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সহযোগী বলে পরিচিত সন্দীপ এর আগে হরিয়ানা পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়েছিলেন। আজ অবশ্য অন্য রূপেই দেখা গেল তাঁকে। বলা যায় যিনি বিয়ে করলেন, তিনি কালা নন, বরং অনুরাধার প্রেমিক।
পাত্রী অনুরাধা চৌধুরী ওরফে ম্যাডাম মিঞ্জ ওরফে রিভলবার রানিকেও অন্য রূপেই দেখা গেল। এককালে গ্যাংস্টার আনন্দপাল সিংয়ের সঙ্গী বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ২০২০ সাল থেকে কালার প্রেমিকা। ২০২১ সালে দিল্লি পুলিশের জালে কালার সঙ্গে জুটিতে ধরা পড়েছিলেন। সেই সময় লিভ-ইনে ছিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, রিভালভার রানির আরেক নাম ম্যাডাম মিঞ্জ হওয়ার কারণ তাঁর প্রথম স্বামী দীপক মিঞ্জ। যাঁর সঙ্গে ২০০৭ সালে বিয়ে হয়, বিয়ে ভাঙে ২০১৩ সালে। কেউ কেউ বলেন, ব্যবসার পার্টনার কোটি টাকা প্রতারণা করার পরেই অপরাধ জগতে জড়ান অনুরাধা। তিনি আদতে ভালো পরিবারের মেয়ে, কম্পিউটার অ্যাপলিকেশনের ডিগ্রিও রয়েছে তাঁর। আর কী ফেরা হবে পুরনো জীবনে? বিশেষত গ্যাংস্টার কালা জঠেড়ীর আইনত দাম্পত্য শুরুর পর? বাস্তবিক এ যেন বন্দুক ও বুলেটের প্রেম! শোনা যাচ্ছে- প্রেমিক তথা স্বামী কালা জঠেড়িকে জেলমুক্ত করতে আইন পড়ছেন অনুরাধা চৌধুরী ওরফে ম্যাডাম মিঞ্জ ওরফে রিভলবার রানি। নিজেই কেস লড়বেন।