অর্ণব আইচ: গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা উর্মিলা জুন্ডের খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল মৃতার বড় ছেলের স্ত্রী ডিম্পল এবং তার ১৮ বছরের মেয়ে কণিকা জুন্ডকে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান মা ও মেয়ের পাশাপাশি খুনের সঙ্গে জড়িত ডিম্পলের প্রেমিক সৌরভ পুরী। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক ছিল। শুক্রবার সন্ধেয় তাকে পাঞ্জাব থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। ১. রিচি রোডের ফ্ল্যাটটি বৃদ্ধার প্রয়াত বড় ছেলে মনদীপ এবং ছোট ছেলে বলরাজের নামে ছিল। কিন্তু ডিম্পল চেয়েছিল ফ্ল্যাটটি সম্পূর্ণ নিজের নামে করতে। যাতে বাধা দেন উর্মিলা দেবী। ২. ব্যাংকের লকারটি ডিম্পল এবং তার শাশুড়ি অর্থাৎ উর্মিলা দেবীর নামে ছিল। কিন্তু সেটি পুত্রবধূকে ব্যবহার করতে দিতেন না বৃদ্ধা। নিজেই কতৃত্ব ফলাতেন। যাতে বেশ বিরক্ত ছিল ডিম্পল। ৩. পরিবারের ব্যবসার অংশ বড় ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে সমানভাবে বিভক্ত ছিল। কিন্তু মনদীপ না থাকায় বৃদ্ধা বড় ছেলের ভাগ কমিয়ে দেন। এ নিয়েও শাশুড়ির সঙ্গে বিবাদ ছিল পুত্রবধূর। ৪. পুলিশের সন্দেহ, ডিম্পলের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক জেনে ফেলেছিলেন উর্মিলা দেবী। সেই কারণেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে থাকা হতে পারে। প্রেমিককে জেরা করার পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
[আরও পড়ুন: হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সভা ঘিরে উত্তেজনা চন্দ্রকোণা রোডে, আটকানো হল নেত্রীকে]
এর পাশাপাশি পুলিশ আরও জানতে পারে, ঠাকুমার অতিরিক্ত দাপুটে মেজাজ এবং সংসারে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত ছিল নাতনিরাও। যে কারণে হয়তো মায়ের পরিকল্পনায় শামিল হয় বড় মেয়ে কণিকা ওরফে গুড়িয়া। বৃহস্পতিবার রাতে শেষবার বৃদ্ধার গলা থেকে এই নামটিই শুনতে পেয়েছিলেন দোতলার বাসিন্দা বাড়িওয়ালা। তদন্তে জানা গিয়েছে, ছোট ছেলে বলরাজ ওরফে রানে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কোচবিহারে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ায় দিনকয়েক গরচার বাড়িতে একাই ছিলেন ওই বৃদ্ধা। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগায় ডিম্পলের সঙ্গী। ঠাকুমার রাতের খাবার নিয়ে বুধবার প্রথমে বৃদ্ধার ঘরে যায় ডিম্পলের দুই মেয়ে। কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিচি রোডের বাড়িতে চলে যায় তারা। কিন্তু ডিম্পলের সঙ্গী সৌরভকে নিয়ে ফিরে আসে কণিকা। তারপরই নৃশংসভাবে খুন করা হয় বৃদ্ধাকে বলে অনুমান। বড় নাতনির সামনেই ঠাকুমাকে খুন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয় বৃদ্ধাকে। তবে তাতে বাধা দিলে গলা, বুক এবং পেটে একাধিকবার কোপানো হয় তাঁকে। তলপেটও আড়াআড়িভাবে চিরে দেওয়া হয়। খুনের পর আলাদা করে দেওয়া হয় ধড় এবং মুণ্ড। প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘটনাস্থল ভাল করে ধুয়েও দেওয়া হয়। তবে খুনের কারণ ঠিক কী, সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও স্পষ্ট হবে। যে দ্রুততার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল, তার জন্য তদন্তকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
[আরও পড়ুন: পূর্ব মেদিনীপুরে আক্রান্ত সায়ন্তন বসু, বিজেপি নেতার গাড়ি ভাঙচুর]
The post অবৈধ সম্পর্ক জেনে ফেলায় করুণ পরিণতি! গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা খুনে গ্রেপ্তার পুত্রবধূ ও নাতনি appeared first on Sangbad Pratidin.