দুলাল দে: আশঙ্কাটা আগেই করেছিলেন। আর তাই আগেভাবে নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে ভিডিও ক্লিপিংস জুড়ে সাফের ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। তাতে অবশ্য কিছু লাভ হল না। ম্যাচের আগের দিন ডিনারের পর ভারতীয় কোচ যখন সুনীল ছেত্রীদের সঙ্গে টিম মিটিং করছেন, ঠিক সেই সময়েই ভারতের টিম ম্যানেজার ভেলুকে চিঠি দিয়ে সাফ ডিসিপ্লিনারি কমিটি এবং এথিক্স কমিটির সচিব তানজিম আহমেদ খান জানিয়ে দেন, কুয়েত ম্যাচে লাল কার্ডের জন্য এমনিতেই সেমিফাইনালে নির্বাসিত স্টিমাচ।
এবার আরও একটা ম্যাচ নির্বাসন বেড়ে গেল। যার অর্থ, ভারত ফাইনালে গেলেও কোচের বেঞ্চে স্টিমাচ আর বসতে পারবেন না। এখানেই শেষ নয়। এর সঙ্গে শাস্তিস্বরূপ এক মাসের মধ্যে জরিমানা বাবদ ৫০০ ডলার জমা দিতে হবে সাফকে। এই চিঠি পাওয়ার পর ভারতীয় দলে (Indian Team) একটা ধাক্কা লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কোচ বুদ্ধি করে তাঁর এই নির্বাসনটাকেই হাতিয়ার করে নিয়েছেন। এদিন টিম মিটিংয়ে বলেছেন, অন্যায়ের এই প্রতিবাদটা শনিবার লেবাননের বিরুদ্ধে মাঠেই করতে হবে। বললেন, “পুরো প্রতিযোগিতা ঘিরে আমাদের সঙ্গে কী কী অন্যায় হয়েছে, সবচেয়ে ভাল তোমরা জানো। মাঠে যাও। অ্যান্ড কিল দেম।”
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের আগে ভারতে আসছে অস্ট্রেলিয়া, স্মিথদের বিরুদ্ধেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি রোহিতদের]
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য দু’বছর আগে মালদ্বীপে সাফ ফাইনালেও কার্ড সমস্যায় মাঠে থাকতে পারেননি স্টিমাচ। ফাইনালে কোচের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী ভেঙ্কটেশ। ফলে কোচের চেয়ারে বসে স্টিমাচের এই বারবার কার্ড দেখা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি সাফের তিন সদস্যর ডিসিপ্লিনারি কমিটি। তবে এমন সময় নির্বাসনের কথা জানা গেল, যখন রাত পোহালে সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামবেন সুনীলরা।
ইগর স্টিমাচ এমনিতেই প্রচণ্ডভাবে আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন। আর এদিন তো যেন জ্বলছিলেন। তবে সেমিফাইনালে লেবাননের বিরুদ্ধে তিনি বেঞ্চে থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনও তফাৎ হবে না বলে মনেই করছেন তিনি। এমনকী তাঁর পরিবর্তে শনিবারে মাঠের মধ্যে যিনি কোচের চেয়ারে বসবেন, সেই মহেশ গাওলি পর্যন্ত বলছিলেন, “মাঠে নামার আগে পর্যন্ত ইগরের নির্দেশ নিয়ে নেব। তারপর মাঠের ভিতর ফুটবলাররা তো দলের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলবে। কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” কোচ ইগর স্টিমাচও বললেন, “এটা একটা প্রসেস। দিনের পর দিন করতে করতে ফুটবলাররা জানে, কখন কী করতে হবে। আর এই লেবাননের বিরুদ্ধেই এর আগে দু’বার আমরা খেলেছি।”
লেবাননের যে দলটির বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে ওড়িশাতে একবার ড্র, আরেকবার ফাইনালে হারানো সম্ভব হয়েছে, সেই দলেরই কিছু ফুটবলার চোটের জন্য সাফে আসেননি। লেবানন কোচ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, “ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের দল থেকে চোটের জন্য বাদ গিয়েছেন দু’জন ফুটবলার। আমরাও কিন্তু ভারতীয় দলকে ভালভাবে দেখে নিয়েছি।” আর তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় কোচের অনুপস্থিতিতে লেবানন কোচও মনে করছেন, “কিছুটা হলেও কিন্তু সমস্যায় পড়বে ভারতীয় দল।”
লেবানন ম্যাচের জন্য ভারতীয় দল প্রস্ততি শুরু করে দিয়েছে শুক্রবার সকালে থেকেই। কুয়েত ম্যাচে মাঠের বাইরের নানা ঘটনার পর ফুটবলাররা যাতে মানসিক ভাবে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে পারেন, তাই সব ফুটবলারকেই শিবির থেকে ছুটি দিয়ে বলেছিলেন, নিজের মতো করে কাটাতে। আর শুক্রবার সকালেই ফুটবলারদের সবার আগে শুরু হল মেডিটেশন ক্যাম্প। তারপর স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট কখনও এক-এক জনের সঙ্গে, কখনও গ্রুপ করে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করলেন। কারণ, স্টিমাচ মনে করছেন, কুয়েত ম্যাচে ধাক্কার পর, লেবানন ম্যাচের আগে ফুটবলারদের খুব দ্রুত মানসিকভাবে আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি সন্দেশ ঝিঙ্ঘানের বিকল্প নিয়ে। আনোয়ারের সঙ্গে কাকে খেলাবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভারতীয় কোচ একবার ভাবছেন, মেহতাব সিংয়ের কথা। আরেকবার রাহুল ভেকের কথা। প্রথম পছন্দ অবশ্যই আনোয়ার-মেহতাব। কিন্তু দু’জনেই লেফট স্টপার। যদি মেহতাবকে খেলাতেই হয়, তাহলে আনোয়ার খেলবেন রাইট স্টপার পজিশনে। আর না হলে যিনি রাইট স্টপার পজিশনে খেলতে অভ্যস্ত সেই রাহুল ভেকে খেলবেন আনোয়ার আলির সঙ্গে।
স্টিমাচ চিন্তায় রয়েছেন অনিরুধ থাপার ব্যপারেও। কোচের মতে, টানা খেলে মানিসকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন অনিরুধ। তাঁকে ফাইনালেও দরকার। কিন্তু গ্রুপ ম্যাচে কুয়েতের বিরুদ্ধে ভীষণই ক্লান্ত লেগেছে তাঁকে। এদিন মেডিটেশনের পর ফুটবলারদের যে রিপোর্ট কোচের হাতে এসেছে তাতে, সব কিছুতেই ঠিকঠাক পজিশনে আছেন তিনি। তবুও চূড়ান্ত একাদশে অনিরুধ থাকবেন কি না, শনিবার ম্যাচের দিন সকালে আরেকবার রিপোর্ট দেখে নিতে চান। কোনও কারণে অনিরুধ না খেললে, চারজনের মিডফিল্ড হবে এরকম– রোহিত কুমার, জিকসন সিং, সাহাল এবং ছাংতে। সেরকম ভাবছেন, দুই উইংব্যাক নিয়েও। আকাশ-নিখিলকেই খেলাবেন না, প্রীতম কোটাল-শুভাশিস বসুকে খেলাবেন, তা ম্যাচের আগেই ঠিক করবেন স্টিমাচ।