দেবব্রত মণ্ডল এবং টিটুন মল্লিক: নিত্যদিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু চোখে একরাশ স্বপ্ন আর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য জেদ। এই দুইয়ের যুগলবন্দিতেই মহামারী হোক কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমস্ত বাধাবিপত্তিকে উপেক্ষা করে মাধ্যমিকে (Madhyamik) সফল ওরা। হয়তো মেধাতালিকায় স্থান মেলেনি, টেলিভিশনের পর্দা কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা পায়নি। তবু কোনও অংশে কম নয় ওদের এই লড়াই।
হোগোল নদীর পাড়ে পলিথিনের ঘর। নদীতে বড় জোয়ার এলে জল ঢুকে পড়ে সেই এক চিলতে ঘরে। তখন চৌকির উপরই দিনযাপন। ইয়াস,আমফান যখন আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনে, তখন সেই একচিলতে ঘরও মিশে গিয়েছিল মাটির সঙ্গে। আবার কোনওরকমে ঘরের চালে প্লাস্টিক, দরমার বেড়া বেঁধে মাথা তুলে দাঁড়ানো। সেই কঠিন সময় কাটিয়ে মাধ্যমিকে নজির গড়ল বাসন্তীর সায়ন মণ্ডল।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের অন্দরে রয়েছে ‘বিজেপির চর’, বিস্ফোরক দাবি সুকান্তর, পালটা দিলেন কুণাল]
বাসন্তীর সেন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। ঝুলিতে এসেছে ৬৬৮। বাবা অসুস্থ দীর্ঘদিন। মা সেলাইয়ের কাজ করে কোনওমতে সংসার চালান। তিনিই কোনওক্রমে ছেলের পড়ার খরচ জোগান। কিন্তু পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা এতটাই যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছে না সায়ন। তার কথায়,”বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হতে চাই। কিন্তু কীভাবে সেই স্বপ্নপূরণ হবে জানি না। বাবা-মা পারবেন না এত খরচ চালাতে।” ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় সায়নের মাও রেখা মণ্ডলও। তিনি শোনাচ্ছেন সংসারের কাহিনী। বলছেন, “স্বামী অসুস্থ। তার পর থেকে আমিই সেলাই করে সংসার টানছি। ছেলেকে পড়িয়েছি। ডাক্তার হতে চায় ও। কিন্তু কীভাবে স্কুলে ভরতি করব ওকে। আমরা পারব না।”
একই পরিস্থিতি বাঁকুড়ার ধান্দা গ্রামের জীবন পাত্ররও। ভোলা হিরাপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সে। মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৩৩। স্বপ্ন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত সে। বলছে, “মাধ্যমিকে ভাল ফল হয়েছে। কিন্তু এর পর কী হবে জানি না।” উনুনের গনগনে আগুনের তাপে পুড়তে পুড়তে প্রতিদিন মুড়ি ভাজেন জীবনের মা প্রতিমাদেবী। সেই মুড়ি বিক্রির অর্থে সংসার চালান বাবা মদন পাত্র। দিন আনি দিন খাইয়ের সংসারে উজ্জ্বল নক্ষত্র তাঁদের ছেলে। কিন্তু ছেলের সাফল্যের পরেও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন মা। প্রতিমা পাত্র বলছেন, “ছেলে তো বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। অনেক খরচ। আমরা কীভাবে খরচ চালাব। কেউ যদিও এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সেটাই শেষ ভরসা।”
[আরও পড়ুন: ধর্ষক নাতজামাই! দিনের পর দিন স্ত্রীর ঠাকুমাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি]
ছেলেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে না চায়। আর তাই সন্তানদের স্বপ্নপূরণ করতে সাহায্য চাইছেন সায়ন-জীবনের অভিভাবকরাও। যদি কেউ এগিয়ে আসে, যদি কেউ পাশে দাঁড়ায়। শুভানুধ্যয়ীদের সাহায্য় চাইছে মাধ্যমিকের কৃতিরাও। যেমন জীবন বলছেন, “আশপাশে বিজ্ঞানের কোনও স্কুল নেই। পড়তে হলে সিমলাপাল না হলে বাঁকুড়া। বাঁকুড়ায় থেকে পড়তে মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ। কে দেবে? কেউ যদি সাহায্য করেন, তাহলে এগোতে পারব।” ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছে সায়নও। তাকিয়ে রয়েছে সহৃদয় ব্যক্তিদের সাহায্যের দিকে। সায়ন- জীবনদের স্বপ্নপূরণ কি হবে? সেই উত্তর আপাতত কালের গর্ভে।
দেখুন ভিডিও: