shono
Advertisement

অশ্বিন-ইন্দ্রজালের নেপথ্যে ইঞ্জিনিয়াররা! কীভাবে তৈরি হন ‘স্মার্ট’ অফস্পিনার?

'ছেলের বিশ্বকাপ-ডাক পরিশ্রমের পুরস্কার', বলছেন অশ্বিনের গর্বিত পিতা।
Posted: 01:13 PM Oct 07, 2023Updated: 01:13 PM Oct 07, 2023

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ‌্যায়: চেন্নাইয়ে এলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়ে লেখার বিষয় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। ঠিক পাওয়া যায়। লাল চেক শার্ট আর ঢোলা ট্রাউজার্সে যে ভদ্রলোককে শুক্রবার দ্বিপ্রাহরিক চিপকে আবিষ্কার করা গেল, আপাত দর্শনে তিনি বড় ছাপোষা। হাতে একটা প্লাস্টিকের প‌্যাকেট ধরা। তাতে রোববারের ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহাযুদ্ধের গোটা কয়েক মহার্ঘ‌্য টিকিট। ভদ্রলোক বলছিলেন যে, রোববার তাঁর কন‌্যা মাঠে আসতে পারবেন না। তাই ঠিক করেছেন, স্ত্রী চিত্রাকে নিয়ে আসবেন। আসবেন, পুত্রের খেলা দেখতে।

Advertisement

পুত্রের নাম? কেন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)! আর ছাপোষা ভদ্রলোক– ভারতীয় অফস্পিনারের পিতা!যিনি প্রবল আত্মবিমুখ, বাড়তি প্রচার এতটুকু চান না। লোকে তাঁর বাড়ি যাক, গিয়ে সাক্ষাৎকার নিক, বিশেষ পছন্দ নয়। শুধু তাই কী? চিপক স্টেডিয়াম থেকে বাড়ি ফেরার সময় ভদ্রলোক যে ‘অ‌্যাপ ক‌্যাব’-ও ধরতে চান না। বরং অটোর সঙ্গে দরদাম করে তাতে উঠে পড়েন!

[আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে হাতিয়ার দিতে চাইছে না আমেরিকা! ক্রমে পালটাচ্ছে মত]

আজ্ঞে হ‌্যাঁ, অটো! অশ্বিনের পিতা রবিচন্দ্রন এ দিন অটো চেপেই চিপক থেকে বাড়ি ফিরলেন! নিঃসন্দেহে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেওয়ার মতো দৃশ‌্য। ভাবাই যায় না যে, ভারতবর্ষের সর্বকালের অন‌্যতম শ্রেষ্ঠ অফস্পিনারের পিতা দামী বিএমডব্লিউ হাঁকিয়ে নয়, বরং অটো চেপে বাড়ি ফিরতে পছন্দ করেন! আর রবিচন্দ্রনের কথাবার্তাও তাঁর বেশভূষার মতোই, বড় সাদামাটা। ছেলের বিশ্বকাপ দলে থাকার কথা ছিল না প্রথমে। কিন্তু অক্ষর প‌্যাটেল চোট পেয়ে যাওয়ায়, দলে ঢুকে যান অশ্বিন।

যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, অবিচল দেখায় তাঁর পিতা রবিচন্দ্রনকে। বলে ফেলেন, ‘‘সুযোগ পায়নি যখন, দারুণ যে ভেঙে পড়েছিলাম, তা নয়। আর পরে সুযোগ পাওয়াটা ঈশ্বরের কৃপা। দেখুন, আমার ছেলের কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই। ক্রিকেট এককালে আমিও খেলেছি। কিন্তু ক্রিকেট সেই পরিচিতি আমাকে দেয়নি, যা আমার সন্তানকে দিয়েছে। অশ্বিন যা পেয়েছে, নিজের পরিশ্রম করে পেয়েছে। বিশ্বকাপে ডাক পাওয়াও তাই।’’

[আরও পড়ুন: কামদুনিতে CID, হাই কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ভাবনা রাজ্যের]

ঘরের মাঠ অস্ট্রেলিয়া সমরের শরিক হতে পারবেন অশ্বিন? ভারতীয় দলের জার্সি পরে? ‘‘পেলে পাবে। সুযোগ পেলে খেলবে। কিন্তু আমার ছেলে কী করল, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশের জয়,’’ আরও একবার সাদামাটা উত্তর আসে। সাদামাটা জীবনযাপন তো স্বয়ং অশ্বিনেরও। অনেক কাজই তিনি নীরবে করে যান, যার খোঁজ কেউ পায় না সচরাচর। এই যেমন চেন্নাইয়ের যে ক্লাবের হয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলেন-টেলেন অশ্বিন, সেই এমআরসি-এ ক্লাবে যে নিজ উদ‌্যোগে স্কাউট টিম বসিয়েছেন, নির্বাচক কমিটি বসিয়েছেন, জানত ক’জন? মোটরে চল্লিশ মিনিট তফাতের দু’টো জায়গার দেখভালের অলিখিত দায়ভার অশ্বিন নিয়ে রেখেছেন বলে শোনা গেল। ‘জেন নেক্সট’ ক্রিকেট অ‌্যাকাডেমি।

যেখানে ভারতীয় অফস্পিনার প্রায়শই চলে যান। পর্যাপ্ত সময় দিয়ে লালন-পালন করেন ভবিষ‌্যতের অশ্বিনদের। আর দ্বিতীয়টা, পূর্বেই লেখা হল। এমআরসি-এ ক্রিকেট ক্লাব। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে নামার আগে যে ক্লাবের হয়ে নেমে পড়েছিলেন অশ্বিন। ম‌্যাচ প্র‌্যাকটিস পেতে।

আর অশ্বিনের এই দুই বিচরণ-ভূমির শাখা-প্রশাখায় তাঁকে নিয়ে কতই না গল্প লুকিয়ে রয়েছে! অশ্বিন যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, এতদিনে সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি যে নিজেও তিন-চার জনের চলমান এক ইঞ্জিনিয়ারিং দল রাখেন, কে জানত! যাঁদের কাজ হল, অশ্বিনকে তাঁর বিপক্ষ সম্পর্কে সম‌্যক ধারণা প্রদান। অর্থাৎ, মারনাস লাবুশেন চার ওভারের মাথায় কোন শট খেলেন, আর দশ ওভারের মাথায় কোনটা– সব।

অ‌্যাকাডেমির সাপোর্ট স্টাফ রাজামানিই বলছিলেন যে, ‘‘এই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দিন দুয়েক সময় থাকে। তার মধ‌্যে ফিডব‌্যাক দিতে হয় অশ্বিনকে। তার পর নেটে নামে অশ্বিন। স্মার্ট ক্রিকেটার ওকে এমনি এমনি বলা হয় না।’’ কী বুঝলেন? লিখলাম না, চেন্নাইয়ে এলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে কিছু না কিছু লেখার বিষয় পাওয়া যায়। ঠিক পাওয়া যায়!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement