নন্দন দত্ত ও অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: সপ্তাহান্তে বাড়িতে দারুণ সময় কাটিয়েছিলেন। সোমবার থেকে কাজে ফেরার পালা। ডিউটি ছিল শতাব্দী এক্সপ্রেসে। কিন্তু নিজের কাজেই সেই ডিউটি বদলেছিলেন। 'অভিশপ্ত' কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের (Kanchanjunga Express) গার্ড হিসেবে শিলিগুড়ি থেকে চড়েন আশিস দে। আর সেই ডিউটি বদলই যে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে, তা তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি আশিস দে। সোমবার উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল রেলের গার্ড আশিসবাবুর। যাঁকে সকালবেলাও চনমনে হয়ে বাজার করতে দেখা গেল, দুপুরে কি না ফিরল তাঁরই নিথর দেহ! এ তো অবিশ্বাস্য! কেউ মেনে নিতে পারছেন না যে পঞ্চাশের 'তরতাজা যুবক' আশিস দে আর নেই। কিন্তু কাহিনির চেয়ে সত্য অধিক বিস্ময়কর। আর মৃত্যু এমনই এক নিঠুর সত্য! তা এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্যি কারও নেই।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড ছিলেন আশিস দে।
শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরসভার ৩২ নং ওয়ার্ডের সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা আশিস দে। শতাব্দী এক্সপ্রেসের গার্ড হিসাবে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নিজের প্রয়োজনেই ডিউটি (Duty) বদল করে সোমবার সকালে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড (Guard) হয়ে ট্রেনে ওঠেন তিনি। ঘণ্টা দেড়েক যেতে না যেতেই ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানি ও নিজবাড়ির কাছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ট্রেনটির পিছনে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি মালগাড়ি। গার্ডের কামরা-সহ দুটি বগি একেবারে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু (Death) হয় গার্ড আশিস দে-র। শুধু মৃত্যু নয়, তাঁর দেহও পাকিয়ে প্রায় কুণ্ডলীর আকার ধারণ করেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
[আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে দেরি কেন? কেন্দ্রকে দুষে ব্যাখ্যা দিলেন মমতা]
কিছুক্ষণ আগে যে স্বামী দিব্যি সুস্থ অবস্থায় গেলেন কাজে, তাঁকে এভাবে ফিরে আসতে দেখতে হবে, এই আশঙ্কা তো স্বপ্নেও ছিল না। আশিসের স্ত্রী দীপিকা দে কান্না চেপে বলছিলেন, ''বহুদিন পর রবিবার রাত্রে গান গাইতে বসেছিলাম দুজনে। একের পর এক গান গাইলাম - ভালোবাসার গান। নিজে কোনওদিন রান্না করত না। কিন্তু রবিবার নিজের হাতে ডিম ভাজল। আর আজ সব শেষ!'' কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনেই ছিল গার্ডের কামরা। ফলে যা হওয়ার তাই। মালগাড়ির ধাক্কায় সেই কামরা কার্যত উড়ে গিয়ে পড়ল ঘাতক ট্রেনের উপর।
[আরও পড়ুন: জীতু গোয়েন্দার ‘অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ’, সঙ্গী শিলাজিৎ-মিথিলারা, ট্রেলারে ঘনাল রহস্য]
সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে (North Medical College) তাঁরই মৃতদেহ ঢুকল প্রথম। আশিসবাবুর দেহ ফিরতেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তাঁর পরিচিতরা ভিড় জমান। সকলের চোখেমুখে বিস্ময়। কেউ কেউ বলছেন, ''আরে! আজ সকালে বাজার করতে গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা হতেই হাসি বিনিময় হল আশিসদার। সেই তাঁর মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হবে ভাবতে পারছি না।'' ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''পাড়ার সবকিছুতে সবার আগে আশিসদা। গান গাইতে হবে, আশিসদা তিনটে গান করবেনই। খেলার মাঠে সবার আগে বছর পঞ্চাশের 'যুবক' ছুটবেন বল নিয়ে। সেই আনন্দপ্রিয় লোকটাকে এভাবে নিথর দলা পাকানো একটা দেহ হিসাবে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে, ভাবিনি কখনও!''