সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।’ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পঙক্তির কথা কি জানেন ওড়িশার (Odisha) নাগেশু পাত্র? ওই বিখ্যাত কবিতা তিনি পড়ুন বা নাই পড়ুন, বুকের ভিতরে যে এই ডাক তিনি শুনতে পেয়েছিলেন তা বলাই যায়। না হলে কলেজের অতিথি অধ্যাপকের দায়িত্বে থাকার পর রাতের অন্ধকারে কুলি হয়ে রোজগার করতে নামতেন না! দিনের বেলার রোজগারে তাঁর সংসার চলে। আর রাতের রোজগারের টাকাতেই তিনি চালান একটি কোচিং সেন্টার। যেখানে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পায় গরিব পড়ুয়ারা।
ইদানীং ‘মুনলাইটিং’ বলে একটি শব্দ বহুল প্রচলিত। দিনের বেলা একটি চাকরি করে রাতে অন্য অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য আরও একটি কাজে যুক্ত থাকাকেই এই নামে ডাকা হয়। সেই হিসেবে নাগেশুও তাই করছেন। তবে তফাত হল তিনি নিজের জন্য নয়, অতিরিক্ত উপার্জনের পথে হাঁটছেন এক মানবিক কারণে। বেরহামপুর রেল স্টেশনে তিনি অন্যের মোট বইছেন যাতে সেই টাকায় ওই কোচিংয়ের শিক্ষকদের মাইনে দেওয়া যায়।
[আরও পড়ুন: খাবারে চুল পড়ায় ‘শাস্তি’, মারধরের পর স্ত্রীর মাথা মুড়িয়ে দিল স্বামী!]
নাগেশুর দিন শুরু হয় বেসরকারি এক কলেজে অধ্যাপনার মধ্যে দিয়ে। এরপর তিনি তাঁর খোলা কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়ান। তারপর রাত গড়ালেই শিক্ষকতা, অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে বেরহামপুর রেল স্টেশনে চলে যান মোটবাহকের কঠোর পরিশ্রম করতে। কোভিডের সময় থেকে গরিব ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে পড়ুয়া বাড়তে থাকায় তা কোচিং সেন্টারের রূপ নেয়। এই মুহূর্তে তাঁর কোচিংয়ে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অসংখ্য পড়ুয়া পড়তে আসে। তাদের পড়ানোর দায়িত্বে রয়েছেন চারজন শিক্ষক। এঁদের বেতন বাবদ মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয় তাঁর। এই অর্থ তিনি তুলে নেন বেরহামপুর স্টেশনে শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিশ্রম করে।
বাড়িতে রয়েছেন বাবা ও মা। তাঁদের এবং নিজের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির জন্য অতিথি অধ্য়াপকের চাকরিটি করেন নাগেশু। কিন্তু অধ্যাপকের চাকরি করার পর দিনের শেষে কুলির কাজ করতে কি কোনও কুণ্ঠাই কাজ করে না? এর উত্তরে ৩১ বছরের নাগেশুর সপাট জবাব, ”লোকে যা বলুক বলতে দিন। আমি পড়াতে ভালবাসি। এবং ওই দরিদ্র পড়ুয়াদের পড়ানোর কাজ করে যাব।”