shono
Advertisement

Breaking News

সুরে সুরে একশো, শতবর্ষে পাকড়াশির হারমোনিয়াম, সুরম্য এক সন্ধ্যায় উদযাপন

উদ্যোগে ‘সংবাদ প্রতিদিন’। নিবেদনে ‘শ্যামসুন্দর কোং জুয়েলার্স’।
Posted: 03:18 PM Apr 08, 2023Updated: 03:18 PM Apr 08, 2023

স্টাফ রিপোর্টার: সকাল-সন্ধেয় বাঙালির গলা সাধার সঙ্গে যে-যন্ত্রের যোগসাজশ অচ্ছেদ্য, শুনলে বিশ্বাস করা শক্ত যে, একশো বছর আগেও সেই হারমোনিয়ামের (Harmonium) কোনও অস্তিত্ব ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর দিয়ে হারমোনিয়াম নির্মিত হয়। আর, তা যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পৌঁছয়, রবি ঠাকুর পত্রপাঠ এই সাংগীতিক ইনস্ট্রুমেন্টটিকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল, এটি ‘বেসুরো’। ‘আকাশবাণী কলকাতা’ পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ‘ব্যান’ করে রেখেছিল হারমোনিয়ামকে। কিন্তু কালের যাত্রাপথে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে হারমোনিয়াম হয়ে উঠেছে বাঙালির সুরসাধনার অবিকল্প অবলম্বন।

Advertisement

ছবি: শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়

এর জন্য প্রায় সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ‘পাকড়াশি অ্যান্ড কোং’ (Pakrashi & Co.)। ১৯২২ সালে এটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন সুধীরচন্দ্র পাকড়াশি। প্রথমে বানানো হত গ্রামোফোন। ধীরে ধীরে হারমোনিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সুধীরবাবুর সঙ্গে বিশেষ সখ্য ছিল লেজেন্ড পঙ্কজকুমার মল্লিকের। এঁরা দু’জন এবং সুধীরবাবুর এক ভাই হেমচন্দ্র পাকড়াশি – একত্রে শুরু করেন হারমোনিয়াম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরে সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাসের মতো কিংবদন্তি শিল্পীর সূত্র ধরে ছড়িয়ে পড়ে হারমোনিয়ামের আগলহীন আবেদন।অচ্ছুৎ ভাবটি কাটে। দূর হয় মানসিক দোলাচল। ‘সা রে গা মা’ চিনে নিতে ধ্রুবতারার মতো অনিবার্য হয়ে ওঠে হারমোনিয়ামের সঙ্গত।

[আরও পড়ুন: মা হলেন ‘বালিকা বধূ’র অভিনেত্রী নেহা, কলকাতার হাসপাতালে জন্ম নিল ফুটফুটে সন্তান]

শতবর্ষ অতিক্রম করেছে ‘পাকড়াশি অ্যান্ড কোং’। সেই উপলক্ষে শুক্রবার ‘ইজেডসিসি’-তে আয়োজন করা হয়েছিল সুরম্য এক সন্ধ্যার। ‘সুরে সুরে একশো’। উদ্যোগে ‘সংবাদ প্রতিদিন’। নিবেদনে ‘শ্যামসুন্দর কোং জুয়েলার্স’। অন্যান্য সহয়োগী ‘খুকুমণি আলতা সিঁদুর’, ‘কেকস’, ‘আশা অডিও’, ‘বিগ এফএম’, ‘ইউনিক আউটডোর’ ও ‘টিএমএস’। প্রধান অতিথি রূপে এদিন উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ঊষা উত্থুপ, ‘শ্যামসুন্দর কোং জুয়েলার্স’-এর শীর্ষকর্তা রূপক সাহা, ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস প্রমুখ।

ছবি: শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়

তাজ্জব লাগে ভাবলে– এমন অনুষ্ঠানের জন্য প্রথমে স্পনসর খুঁজে পাওয়া ভার হচ্ছিল! রূপক সাহার প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এলে অনুষ্ঠানটি সম্ভবপর হত কি না সন্দেহ। তবে বাঙালি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদারক্ষায় তৎপর হয়েছে আরও একটি বাঙালি প্রতিষ্ঠান– সবশেষে এটিই বড় কথা। ‘প্রতিকূলতা’ শব্দটি যেন রাবণের মাথার মতো। অশেষ। বাঙালি একটি প্রতিষ্ঠান এত ধরনের ঝড়ঝাপটা সামলে একশো বছর ধরে ‘সক্রিয়’, এ বড় কম গৌরবের কথা নয়। আর, সক্রিয়তার বহরটি কেমন, তা-ও শুনলে ঘোর লেগে যায়।

অল্প বাংলা আর অনেকটা স্বাদু ইংরেজির মিশেলে ঊষা উত্থুপ শোনালেন এমনই একটি গল্প। দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব কণ্ঠশিল্পী ‘পাকড়াশির হারমোনিয়াম’-এর ভক্ত। ইলাইয়ারাজা-র নামও থাকবে সে-তালিকায়। ঊষা উত্থুপের কাছে এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী চেয়েছিলেন একখানি ‘পাকড়াশির হারমোনিয়াম’। ঊষা উত্থুপ তা পৌঁছে দেন। এরপরের কথোপকথনটি ভারি চিত্তাকর্ষক। ইলাইয়ারাজা জিজ্ঞেস করেন– কত দাম এই যন্ত্রটির? ঊষা উত্থুপ বলেন– দামের কথা উঠলে বলব, এটি অমূল্য। শুনে স্মিত হাসিতে ভরে গিয়েছিল ইলাইয়ারাজার মুখ।

ছবি: পিন্টু প্রধান

‘সুরে সুরে একশো’ যে-অনুষ্ঠানের নাম, সেখানে সংগীতের নানা শাখার রস-মৌতাত সঘন হয়ে উঠবে, বলা বাহুল্য। ছিল সেতার, সরোদ ও তবলার ত্রিবেণীসঙ্গম। সেতারে ছিলেন পণ্ডিত পার্থ বসু। সরোদে পণ্ডিত অমিতাভ মজুমদার। তবলায় পণ্ডিত ইন্দ্রনীল মল্লিক। মাইহার-সেনিয়া ঘরানা আশ্রয় করে তাঁরা পরিবেশন করেন অনন্য ঐক্যতান। তারপরে ছিল শোভনসুন্দর বসুর আবৃত্তি। এরপরে সংগীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী সেন, শ্রাবণী সেন ও শ্রীকান্ত আচার্য। ‘তোমার তুলনা আমি খুঁজি না কখনো/ বহু ব্যবহার করা কোনো উপমায়’– কথাগুলি কবীর সুমনের গানের সুবাদে মিথ হয়ে গিয়েছে। এই গানটি দিয়েই শ্রীকান্ত আচার্য শুরু করেছিলেন তাঁর নিবেদন। ‘রাতের বাহারি চাঁদে, আফিমে গোলাপে/ হারমোনিয়াম টানা সুরেলা প্রলাপে’ এইভাবে একটি সন্ধ্যা যেন নদীর মতো উৎস থেকে বয়ে এসে সমর্পিত হয় মনকেমনের মোহানায়। কোথাও বাড়তি মেদ নেই। অযথা আড়ম্বর নেই। আছে অকৃত্রিম প্যাশন। যা সংগীত-সহ যে কোনও শিল্পের প্রাণভ্রমর।

‘পাকড়াশির হারমোনিয়াম’ একশো পেরল। আরও তো যেতে হবে এগিয়ে। করতে হবে আরও টাইম ট্রাভেল। সে-কথা মনে করিয়ে দিতেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস বলেন– সময় এসে আমাদের একদিন না একদিন গ্রাস করবে। আয়ু সীমিত। কিন্তু পাকড়াশির হারমোনিয়াম দু’শো বছর উদ্‌যাপন করবে আরও জাঁকজমক-সহ এই প্রত্যাশা করা কি অন্যায়? উত্তর নিষ্প্রয়োজন।

ছবি: পিন্টু প্রধান

[আরও পড়ুন: ‘অভিনেত্রীকে বিয়ে নয়’, প্রেমের ব্যাপারে বাবাকে অনুকরণে রাজি নয় মিঠুনপুত্র নামাসি! ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার