সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাথরাস কাণ্ড কি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? পদপিষ্ট হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু ঘটনায় ৮৫০ পাতার রিপোর্ট পেশ করল বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে পেশ করা হয় এই প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। জানা যাচ্ছে, এই দুর্ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযুক্ত ১২৮ জনের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয় এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে সেদিনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের ভূমিকা ও অব্যবস্থার ছবিটা। পাশাপাশি জানা যাচ্ছে, এই রিপোর্টে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারী দল।
হাথরাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে আয়োজিত ওই সৎসঙ্গে ৮০ হাজার লোকের জমায়েতের অনুমতি নেওয়া হলেও, সেখানে যোগ দেন আড়াই লক্ষের বেশি অনুগামী। অনুষ্ঠানের শেষে কাতারে কাতারে ভক্তরা ছুটে যান ভোলে বাবার পায়ের ধুলো ও আশীর্বাদ নিতে। আর তাতেই ঘটে যায় বিপত্তি। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১২৩ জন। এই ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। পাশাপাশি, এই দুর্ঘটনায় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও উঠে আসে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।
[আরও পড়ুন: গাড়ির সঙ্গে আটোর মুখোমুখি সংঘর্ষ, বিহারে শিশু-সহ মৃত ৬]
হাথরাস কাণ্ডে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, “এই ধরনের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না। যদি নিছক দুর্ঘটনা হয়, তবে তার জন্য দায়ী কে? যদি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়ে থাকে তবে কে এই ষড়যন্ত্র রচনা করেছে? সব তদন্ত হবে।" গোটা ঘটনার তদন্তে প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গত বুধবার তদন্ত কমিটি গড়ে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ৭দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই ঘটনার ৮৫০ পাতার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করল সিট। জানা যাচ্ছে, এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে সৎসঙ্গে সেদিনের অব্যবস্থার ছবিটা। পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে সৎসঙ্গের উদ্যোগতাদের ভূমিকা কী ছিল? এই ঘটনায় দায়ী কারা? তার বিশদ তথ্য। জানা যাচ্ছে, গোটা ঘটনায় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। সিটের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এসডিএম, সিও-সহ ৬ আধিকারিককে বরখাস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
[আরও পড়ুন: রাজস্থানের ৪ লোকসভার ৩১টি বুথে ‘শূন্য’ বিজেপি! দলকে ভোট দেননি বুথ সভাপতিরাও]
তবে হাথরাসের সৎসঙ্গে সেদিন যে বেনিয়ম হয়েছিল তা আগেই জানা গিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর অনুষ্ঠানের আয়োজকরা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে যেমন সহযোগিতা করেননি তেমনই পদপিষ্টের ঘটনার পরে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও করেছেন। এত কিছুর পরও নাকি এফআইআরে ভোলে বাবার নাম নেই। উল্লেখ্য, এই ভোলে বাবাকে কেন্দ্র করেই আয়োজিত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। মর্মান্তিক ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর সক্রিয় হতে দেখা যায় পুলিশকে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ৬ জনের মধ্যে ২ জন মহিলা এবং ৪ জন পুরুষ। ওই ৬ জনই সৎসঙ্গের ‘সেবাদার’ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। ঘটনার পরই পালিয়ে যান এই ৬ জন। যদিও পরে এদের মধ্যে এক অভিযুক্ত দিল্লি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।