অভিরূপ দাস: ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক চরমে। কলকাতা পুরসভার হিসেব বলছে, শহরজুড়ে আক্রান্ত ২৯০ জন। চিন্তার বিষয় শিশু আর প্রবীণদের নিয়েই। শহরের সমস্ত স্কুলের জন্য নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে বলা হয়েছে, পরিষ্কার রাখতে হবে স্কুলের ছাদ-আশপাশের এলাকা। যেহেতু ডেঙ্গুর মশা দিনের বেলায় কামড়ায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে ফুল হাতা স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে আসতে বলা হয়েছে। শরীরে অনাবৃত জায়গা যত কম থাকে তত নিশ্চিন্ত। বাঁচা যাবে মশার হুল থেকে।
উল্লেখ্য, সরকারী স্কুলে প্রবেশ অবাধ হলেও, একাধিক বেসরকারি স্কুল পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের ঢুকতে দেয় না। নয়া নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বেসরকারি স্কুল পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে সহযোগিতা করতে বাধ্য।
মঙ্গলবার পুরসভায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী, জনস্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সচিব রূপম বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। শহরের একাধিক সরকারি জমি, আবাসন চিন্তা বাড়িয়েছে পুরসভার। এদিন তিন নম্বর বরোয় মুচিবাজারে কোল ইন্ডিয়া গোডাউনে হানা দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বোরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য কিশোর রাউত। কেন্দ্রীয় সরকারের এই জমিতে ভাঙাচোরা গাড়ি, ফাটা টিউব, প্লাস্টিকের গ্লাসের স্তুপ। তাতে গিজগিজ করছে মশার লার্ভা। ইতিমধ্যেই জুলাইয়ে,আগস্টে টানা দু’বার এই চত্ত্বর পরিস্কার করার জন্য নোটিস দিয়েছিল পুরসভা। লাভ হয়নি। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, একজন মারা গেলেই প্রশাসনের খুঁত ধরার জন্য কেন্দ্র হইহই করবে। অথচ কেন্দ্র সরকারের এই সংস্থার চূড়ান্ত অপদার্থতার কারণে যেভাবে ডেঙ্গুর মশার চাষ হচ্ছে সেদিকে নজর নেই। উলটোদিকে বিএসএনএলের একটি জমিতেও এদিন যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। দুই সংস্থার বিরুদ্ধেই মিউনিসিপ্যাল কোর্টে কেস করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
[আরও পড়ুন: বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই সুখবর, ১৬০০ কোটি বরাদ্দ আসতে পারে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরে]
টানা দু’বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বিপদ বাড়ে। অনেক সময় উপসর্গ নামমাত্র হওয়ায় ডেঙ্গু হয়েছে কিনা টের পাননা আক্রান্ত। শুধুমাত্র আইজিজি বা ডেঙ্গুর ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি টেস্ট করলেই ধরা পড়ে চুপিসারে ডেঙ্গু শরীরে প্রবেশ করেছে কি না। মঙ্গলবার মূল্যবান সেই আইজিজি কিট কলকাতা পুরসভাকে দেওয়ার কথা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রতিটি বোরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকবে এই আইজিজি কিট।
পুরসভায় ডেঙ্গু বৈঠকে এদিন স্বাস্থ্যদপ্তরের হাতে ত্রিশটি ছবি-সহ একটি ফটো অ্যালবাম তুলে দিয়েছেন ডেপুটি মেয়র। কী রয়েছে তাতে? পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের কোন কোন সরকারি আবাসন, হাসপাতালের অবস্থা উদ্বেগজনক তার ছবিগুচ্ছ স্বাস্থ্য সচিবকে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু মরশুমে কলকাতা পুরসভার মাথাব্যথার কারণ খালি জমি। শহরে এমন জমির সংখ্যা ৫ হাজার ৮০। এসব জমিতে হাঁটু সমান আগাছা। স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম সে তালিকা দেখে জানিয়েছেন, ‘‘দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নামে নোটিস ইস্যু করতে হবে। মশা জন্মানোর পরিবেশের দায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদেরই নিতে হবে।’’
এদিন পুরসভাকেও ডেঙ্গুর মারণ স্ট্রেন চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ নির্দেশিকা তুলে দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। যেখানে বলা হয়েছে, ধুম জ্বরের সঙ্গে প্রস্রাব কম হচ্ছে, গায়ে হাত পায়ে মারাত্মক ব্যথা এমনটা দেখলেই সতর্ক হতে হবে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই চিহ্নিত করণের কাজ করবেন।