সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, বাইরের খাবার এড়িয়ে চলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করেন— এমন জীবনযাপন করেও পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি লুকিয়ে থাকতে পারে। কারণ, দূষিত পানীয় জলের মাধ্যমেই নিঃশব্দে শরীরে ঢুকে পড়ছে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) নামের এক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। সম্প্রতি কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে এক সচেতনতা সভায় চিকিৎসকেরা এই বিষয়টি তুলে ধরেন।
চিকিৎসকদের দাবি, দেশে এবং বিশেষত রাজ্যে পানীয় জলের মান যেমন অবনতি হচ্ছে, তাতে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দারুণভাবে বাড়ছে। অধিকাংশ মানুষই প্রথমদিকে এর কোনও লক্ষণ বুঝতে পারেন না। ধীরে ধীরে এটি পাকস্থলীতে বাসা বেঁধে আলসার থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ঘটায়, যা পরবর্তী সময়ে স্টম্যাক ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে স্টম্যাক ক্যানসার আক্রান্ত অনেক রোগীর জীবনপঞ্জিতে কোনও না কোনও সময় হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির সংক্রমণের উল্লেখ মিলেছে।
এই পরিস্থিতিতেই দ্রুত শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিশেষ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সূচনা করল কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক ডা. সুপ্রতিম ভট্টাচার্য, ডা. সঞ্জীবন পাত্র, ডা. রজত খাণ্ডেলওয়াল ও হাসপাতালের মেডিক্যাল সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডা. সুরিন্দর সিং ভাটিয়া।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. রজত খাণ্ডেলওয়াল জানান, আট ও নয়ের দশকে জাপানে স্টম্যাক ক্যানসারের প্রকোপ ছিল অত্যন্ত বেশি। সেখানে জাতীয় পর্যায়ের স্ক্রিনিং চালু হতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। কারণগুলি বোঝার সুযোগ পায় সাধারণ মানুষ, বাড়ে সচেতনতা। ফলে আজ জাপানে স্টম্যাক ক্যানসার উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ডা. খাণ্ডেলওয়ালের মতে, “আমাদের দেশ তথা এ রাজ্যে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু সচেতনতা বাড়িয়ে আলসার বা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর সংক্রমণ ধরে ফেলা য়ায়, তবে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, বাড়িতে ওয়াটার পিউরিফায়ার থাকলেই সব ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয় না। “হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি অত্যন্ত সূক্ষ্ম জীবাণু, সাধারণ পিউরিফায়ারে এটি নষ্ট হয় না,” মন্তব্য করেন তিনি।
দীর্ঘদিন বদহজম, পেটভার, অম্বল, পেটজ্বালা, অস্বস্তি-- এ ধরনের উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্ক্রিনিং করানো উচিত। পাশাপাশি দূষিত জল, ধূমপান, মদ্যপান, অপিরিশুদ্ধ বা কাঁচা খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে স্টম্যাক তথা পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বাড়ে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
