shono
Advertisement
Diwali 2024

দীপাবলির আগে চোদ্দ শাক খাওয়ার নিয়ম, কোন শাকের কী গুণ?

এত গুণ জানলে এমনিই খাবেন।
Published By: Suparna MajumderPosted: 03:57 PM Oct 22, 2024Updated: 04:50 PM Oct 22, 2024

অনেকেই জানেন না দীপাবলির আগের দিন ১৪ রকম শাক খাওয়ার সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিবিড় সম্পর্কের কথা। এই নিয়মের আড়ালে উপকারিতা অফুরান। জানাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় বালস্বাস্থ্য কার্যক্রম (RBSK) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মেডিক্যাল অফিসার, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. সুমিত সুর। শুনলেন গৌতম ব্রহ্ম

Advertisement

কালীপুজো। দীপাবলির(Diwali 2024) আগে চতুর্দশীতে ১৪ প্রকার প্রদীপ জ্বালানো, ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার রীতি পুরাকাল থেকেই চলে আসছে। চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, অষ্টাঙ্গ হৃদয়, ভাবপ্রকাশ-সহ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে চোদ্দো শাকের বিশেষ বর্ণনা আছে। এই রীতি স্বাস্থ্যসম্মতও। রঘুনন্দন, ষোড়শ শতাব্দীতে তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ ‘কৃত্যতত্ব্যে’, যেখানে তিনি প্রাচীন স্মৃতির গ্রন্থ ‘নির্ণয়ামৃত’-র অভিমত অণুসরণ করে এই ১৪ প্রকার শাকের উল্লেখ করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

কোন শাক, কী গুণ?
ওল- ওলের কন্দ অর্শ, প্লীহা বৃদ্ধির রোগ ও রক্ত আমাশার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
কেঁউ- কেঁউ পাতার রস ভাল হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, কৃমি, চুলকানি, ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়।
বেতো বা বেথুয়া- এই শাকে প্রচুর ভিটামিন–এ, ভিটামিন–সি, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, মুখে ঘা, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী।
কালকাসুন্দে- অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, জ্বর, ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
সরিষা- ভিটামিন K, C ও E এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক।
নিম- নিমপাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমূত্রর অন্যতম ঔষধ।

ছবি: সংগৃহীত


জয়ন্তী- বহুমূত্র, শ্বেতী, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।
শালিঞ্চ বা শিঞ্চে- এই শাককে সাঁচিশাকও বলে। চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ণ চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।
গুড়ুচি- ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায় ।
পটলপত্র- রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসাবে এবং লিভার ও চর্মরোগ সারাতে পটলপাতা খুব কার্যকর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ব্যবহার হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়, খিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। ক্ষতস্থানে পটলপাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
শেলুকা- কাঁচা গাছ ও বীজ মশলা হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। আর শাক হিসাবে ব্যবহৃত হয় পাতাসহ ডগা। সংস্কৃতে শুলফাকে বলে শতপুষ্প। ভেষজ। মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর।
হেলেঞ্চা বা হিঞ্চে- হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, হিসাবে ব্যবহৃত করা হয়। নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে তাই রোগ প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।

ছবি: সংগৃহীত


ঘেঁটু/ঘণ্টাকর্ণ- এর পাতাতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
শুষনি- বিজ্ঞানসম্মত নাম মার্সিলি কোয়াড্রিফোলিয়া বা মার্সিলি মিনুটা, শুষনি হল উদ্ভিদ। ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে শুষনি খুব পরিচিত। ভোজ্য অংশ পাতা, নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি

শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় এই যে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে উল্লিখিত প্রতিটি শাকই জন্মায় কমবেশি এই সময় সারা জেলাজুড়েই। আপামর জনগণ একটু সচেতন হলেই এই উদ্ভিদকুলের সংরক্ষণ, সংবর্ধন ও ব্যবহার সহজেই করতে পারেন যা আপনাকে, পরিবারের সকলকে শুধু সুস্থ রাখবেই তা নয়, যার ফলে আর্থিকভাবেও আপনি লাভবান হতে পারেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কালকাসুন্দে অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, জ্বর, ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
  • পটলপত্র রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসাবে এবং লিভার ও চর্মরোগ সারাতে পটলপাতা খুব কার্যকর।
Advertisement