অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: দুপুরের তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। আবার সন্ধ্যা হতে না-হতে হতেই হাড়কাঁপুনি ঠান্ডা। আবহাওয়ার এমন ভোলবদলে কাবু উত্তরবঙ্গের মানুষজন। 'ডাস্ট অ্যালার্জি' সংক্রমণে ঘরে ঘরে ছড়িয়েছে সর্দি, কাশি, জ্বর। আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, উত্তরে শীত পাড়ি জমায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে বৃষ্টির হাত ধরে। এবার ডিসেম্বরের শেষ প্রান্তেও বৃষ্টি নেই। ওই কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে দিনে তাপমাত্রা চড়ছে। ভাসমান ধূলিকণা নিচে নেমে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। তবে শুক্রবার থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিছু এলাকায় কুয়াশার দাপট বাড়তে পারে। সবমিলিয়ে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা আরও বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, "আকাশ পরিষ্কার থাকায় দিনে প্রখর রোদের তাপ। সেই কারণে উষ্ণতা ভালোই অনুভব হচ্ছে। কিন্তু সূর্য ডুবতেই তাপমাত্রা হু হু করে নামছে। সেজন্য ভালো ঠান্ডা লাগছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে বৃষ্টি না-হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি খুব একটা পালটাবে না।" এদিকে দিনে গরম, রাতে ঠান্ডার কবলে পড়ে জেরবার দশা হয়েছে আট থেকে আশির। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে কাবু শিশু এবং বয়স্করা। শিশুদের জ্বর ১০২-১০৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাচ্ছে। কিছুতেই তাপমাত্রা নামছে না। বয়স্কদের জেরবার হতে হচ্ছে কাশিতে। সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর।
শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার প্রতিটি শহরে চিকিৎসকদের চেম্বারে জ্বর, সর্দি, কাশির রোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলির আউটডোরেও। শিলিগুড়ি শহরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সুবল দত্ত জানান, ডাস্ট এলার্জি থেকে ঋতু পরিবর্তনের হাঁচির সময় রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা উচিত। সবসময় হাতের কাছে টিস্যু বা রুমাল থাকে না। সে ক্ষেত্রে হাতের কনুই বাঁকা করে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ফুলহাতা শার্ট বা জামা পরা থাকলে ভালো। জামার আস্তিনে বা কলার টেনেও হাঁচি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, এই সময় শিশুদের সর্দি, কাশি, জ্বর হচ্ছে। তবে ভয়ের কিছু নেই। দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে উঁচু এলাকায় তুষারপাত হতে পারে। সমতলের কয়েকটি জেলায় ঘন কুয়াশার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। উত্তর সিকিমের উঁচু এলাকায় অবশ্য তুষারপাত অব্যাহত রয়েছে। সেখানে পর্যটকের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। সেখানকার পারমিট সেল বিভাগের সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সিকিমে একদিনে পর্যটকদের ভিড়ের নিরিখে চলতি বছরের রেকর্ড ভেঙেছে উত্তর সিকিম। ১ হাজার ৪০৩ জন পর্যটক ২৪৯টি গাড়িতে লাচেন, লাচুং, গুরুদোংমার হ্রদে ভ্রমণ করেছেন। ওই পর্যটকদের মধ্যে ৮১৪ জন পুরুষ, ৩৭১ জন মহিলা ছিলেন। বাকিরা শিশু। প্রত্যেকে অনলাইনে বুকিং করে তুষারপাত দেখতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। আরও ৬১ জন সিকিমে পৌঁছে পারমিট নিয়েছেন।