বর্তমানে আইভিএফ পদ্ধতি সন্তানধারণের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বয়স, স্বাস্থ্য সমস্যা বা শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মানে জটিলতা থাকলে। তবে এটি কাদের জন্য প্রযোজ্য, কখন প্রয়োজন এবং কীভাবে সফল হতে পারে—এগুলি জানা জরুরি। দেরিতে মা হতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য আইভিএফ কার্যকর হলেও, অন্যান্য শারীরিক সমস্যাতেও এটি একটি সমাধান হতে পারে। আশার কথা শোনালেন ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টারের কর্ণধার ডা. এস এম রহমান।
বর্তমানে আইভিএফ করে সন্তানধারনের প্রবণতা খুব বেড়েছে। এটা এখন অনেকেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছেন। তবে এই বিষয়টা যতটা সহজে ভেবে ফেলা যায়, করার ক্ষেত্রে ততটাও সহজ হয় না। কজনই বা জানেন যে কখন বা কাদের আইভিএফ আদৌ দরকার? সব বয়সেই কি এর ফলাফল ভালো? কোন কোন সমস্যায় আইভিএফই একমাত্র সমাধান, সে সব সকল মহিলারই জেনে রাখা খুব জরুরি। কারণ আইভিএফ নিয়ে সঠিক ধারণা অনেকেরই থাকে না। তাই এখন এখানে আইভিএফ সেন্টার যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তের অভাবে অনেক সময়ই জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ছবি: সংগৃহীত
সমস্যার মূলে ওভারিয়ান এজিং
মহিলাদের ডিম্বাণুর কোয়ালিটি কতটা ভালো রয়েছে সেটা নির্ভর করে ওভারিয়ান রিজার্ভের উপর। জন্মের সময় ওভারিতে অসংখ্য ফলিকল বা উসাইট থাকে। তার মধ্যে কিছু সংখ্যক উসাইট বা ডিম্বাণু সারা জীবনে ব্যবহার হয়। বাকি নষ্ট হয়। কিন্তু অটোরিজার্ভ মেকানিজমটা ঠিক থাকা খুব জরুরি। এটা যদি কোনও কারণে নষ্ট হয় বা ওভারিয়ান রিজার্ভ কমে যায় তা হলে যে ডিম্বাণু সন্তানধারণে সাহায্য করে সেই ডিম্বাণুর সংখ্যাও কমে, ফলে প্রেগন্যান্সি আসতে সমস্যা হয়। ওভারিয়ান রিজার্ভ কমে যাওয়ার পিছনে যে সমস্যা তার নাম ওভারিয়ান এজিং। কেন এমন হয়? আসলে কী হয় মহিলাদের বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি ওভারির বয়সও বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ওভারির বয়স মহিলার স্বাভাবিক বয়সের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন হরমোনাল সমস্যা, দেরিতে সন্তানধারণ, পলিউশন থেকে এমন হয়।
কী করে বোঝা যায় ওভারির বয়স বাড়ছে?
এখন যেহেতু অনেকেই দেরিতে সন্তানধারণ করেন তাই কিছু টেস্ট রয়েছে যেগুলো আগে থেকে করে নিলে বোঝা যায় ওভারির বয়স বাড়ছে কি না, ডিম্বাণুর সংখ্যা ঠিক আছে কি না। তার মধ্যে অন্যতম হল এএমএইচ (অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন), এএফসি (অ্যান্ট্রাল ফলিকল কাউন্ট)।
শুধু মহিলাদেরই সমস্যা থাকে এমন নয়, সন্তানধারণের ক্ষেত্রে পুরুষদেরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আজকাল একটু বয়স বাড়লেই শুক্রাণুর মান ও পরিমাণ অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সমস্যা প্রকট হচ্ছে।
আইভিএফ কখন প্রয়োজন?
ওভারিয়ান রিজার্ভ যদি কমে যায় তাহলে আইভিএফ করলে সমস্যা মিটতে পারে। আর পুরুষদের শুক্রাণুর গুণগতমান ও পরিমাণ দুটোই যদি খারাপ হয় তবে সে ক্ষেত্রে মহিলাদের সন্তানধারণে নানা বাধা দেখা দেয়। তখন গতি একটাই, আইভিএফ করে মা ডাক শোনা। শুধুমাত্র বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি চাইলেই যে আইভিএফ দরকার পড়বে এমন নয়। কিছু সমস্যা থাকলেও প্রয়োজন হতে পারে আইভিএফ-এর। যেমন ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লকেজ, এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারি হলেও মহিলাদের নানা সমস্যা হয়।
ছবি: সংগৃহীত
তবে আইভিএফ করলেই যে সর্বক্ষেত্রে সাফল্য একবারেই আসবে সেটাও নয়। সে ক্ষেত্রেও নানা কন্ডিশন রয়েছে। যদি ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে আইভিএফ করানো হয় তবে সাফল্যের হার অনেক বেশি। কিন্তু ৩৯ বছর বয়সের পর করলে ধীরে ধীরে সাফল্যর হার কমতে থাকে। তবে এমনও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, ৫০ বছর বয়সে গিয়েও আইভিএফ করে মা হয়েছেন। পুরোটাই একজনের সর্বোপরি স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। তবে সময়ে সিদ্ধান্ত নিলে ফল মিলবেই।
দেরিতে মা হতে চাইলে
হ্যাঁ, আইভিএফ তো করতে হতেই পারে। তবে তার আগে কিছু বিষয় করে রাখলে আইভিএফের সাফল্যর মাত্রা অনেক বেশি। বিশেষত এএমএইচ ও এএফসি টেস্ট করে যদি কোনও মহিলা দেখেন ডিম্বাণুর পরিমাণ কমছে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু অবিবাহিত হলে উসাইট ফ্রিজিং করে রাখতে পারেন। এতে করে ভালো বা উন্নতমানের উসাইট রেখে দিয়ে পরবর্তীকালে সময়মতো আইভিএফ পদ্ধতিতে সেই উসাইট দ্বারা প্রেগন্যান্সি নেওয়া যেতে পারে। আর বিবাহের পর জানতে পারলে এমব্রায়ো ফ্রিজিং করে পরবর্তীকালে সন্তান নেওয়া যেতে পারে। আজকাল এইসব পদ্ধতি অনেক উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন। কাজেই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম, বরং সাফল্য অনেক বেশি।