সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্তন ক্যানসার শুধু নারীর হয়। এমন একটা বহুল প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু তা মোটেও সঠিক নয়। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের স্তন নারীর মতো বিকশিত না হলেও, পুরুষেরও স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। কারণ, জন্মের সময় অল্প পরিমাণ স্তন টিস্যু নিয়ে পুরুষ জন্ম নেয়। যেহেতু নারীর তুলনায় পুরুষের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলক কম, তাই অনেক পুরুষই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নন। এমনকী অনেকে এটিকে গাইনেকোমাস্টিয়ার মতো সাধারণ রোগ ভেবে ভুল করে থাকেন। ফলে বিষয়টি আড়ালে থেকে যায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরই ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ অক্টোবর মাসটিকে স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস (Breast Cancer Awareness Month) হিসেবে পালন করেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরুষদের স্তন ক্যানসার নিয়ে কী জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা?
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'দ্য ল্যানসেট' একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে যত ব্রেস্ট ক্যানসার হয়, তার মাত্র ১ শতাংশ পুরুষদের হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী পুরুষদের সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রায় ০.৩ শতাংশ। সংখ্যার ধারণায় তা কম হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ দেরিতে ধরা পড়ায় পরিণতি মারাত্মক হয়। ভারতেও এমন ঘটনা দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বহু গুণে।
ভারতে সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সের পুরুষরা বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন। অ্যান্ড্রোমিডা ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর এবং ব্রেস্ট ক্যানসার সেন্টারের প্রধান ডাঃ বৈশালী জামরে বিষয়টি খোলসা করেছেন। তাঁর মতে, পুরুষের স্তন ক্যানসারের নেপথ্যে রয়েছে BRCA জিন মিউটেশন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্থূলতা, লিভারের রোগ প্রভৃতি।
পুরুষদের স্তন ক্যানসার কীভাবে বুঝবেন?
(১) স্তনবৃন্তের কাছে বা ঠিক পিছনে একটি শক্ত, সহজে নড়াচড়া করে না এমন পিণ্ড দেখা দেয়। পিন্ডটি চাকার মতো দেখতে হয়। স্তন ক্যানসারের এই পিণ্ডে সাধারণত কোনও ব্যথা থাকে না। সাধারণ গাইনেকোমাস্টিয়া (স্তন বৃদ্ধি)-এর পিণ্ড রাবারের মতো নরম হয়। সঙ্গে ব্যথাও থাকে। ক্যানসারের পিণ্ডের চাকা থেকে এটি আলাদা।
(২) স্তনবৃন্ত থেকে অস্বাভাবিক রস বা রক্তপাত হয়।
(৩) স্তনবৃন্ত হঠাৎ করে ভেতরের দিকে ঢুকে যায়।
(৪) স্তনের চামড়া কুঁচকে যায়। কিংবা চামড়ায় টোল পড়ে।
(৫) স্তনের চামড়া মোটা ও লালচে হয়ে পড়ে।
(৬) বগলের নিচে ফোলা পিণ্ড দেখা দিতে পারে। এটি লসিকা গ্রন্থিতে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ।
যদি সন্দেহ হয়, তাহলে ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসাউন্ড এবং বায়োপসি করে দ্রুত রোগ নির্ণয় করুন। যাদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসার বা ওভারিয়ান ক্যানসারের অতীত রয়েছে, সেই পুরুষদের ৩৫ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত। সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
(স্তন ক্যানসারের সচেতনতায় বিশেষ উদ্যোগ সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর। এই মারণ রোগে আক্রান্ত এবং জয়ীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আজ, ৩১ অক্টোবর গোলাপী রঙে বদলে যাচ্ছে আমাদের ওয়েবসাইট। স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন।)
