অভিরূপ দাস: সাধারণ অস্ত্রোপচার করে নিঃসরণ নয়। রীতিমতো অ্যানাস্থেশিয়া গ্যাস দিয়ে চঞ্চল চারপেয়েকে অজ্ঞান করে গলায় অত্যাধুনিক যন্ত্র ঢুকিয়ে ফরেন বডি রিমুভাল। যা হত মানুষের শরীরে। তাই হল কুকুরের। অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথোলজি ল্যাবের চিকিৎসকদের দাবি, পূর্ব ভারতে এই প্রথম বাংলায় কুকুরের শরীরে সম্পন্ন হল এমন অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম এন্ডোস্কপিক ফরেন বডি রিমুভাল।
প্রাণে বাঁচল লেকটাউনের বাসিন্দা শক্তিনাথ দে-র পোষ্য। মাস চারেকের বিগল। সম্প্রতি সে গিলে ফেলেছিল বিজাতীয় ধাতব বস্তু। তা থেকেই শুরু শারীরিক সমস্যা। অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথোলজি ল্যাবের কর্ণধার প্রতীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সেতার বাজানোর জন্য আঙুলে এক ধরনের ধাতব উপকরণ পরতে হয়। তাকে বলা হয় মিজরাব। সেটাই গিলে ফেলেছিল চার মাসের ওই সারমেয়। পেটে ঢুকে গিয়েছিল তা। কীভাবে হল এমনটা? শক্তিনাথ দের কন্যা সেতার শেখে। সেতার বাজানোর সময় একদিন সেখানে ঘুরঘুর করছিল পোষ্য। সবার অজান্তেই সে গিলে ফেলে মিজরাব। প্রথমে বাড়ির লোক ভেবেছিল মলের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে ওই ধাতব অংশ। কিন্তু তা হয়নি।
অস্ত্রোপচার চলছে ওই সারমেয়র।
শুরু হয় শারীরিক সমস্যা। শহরে সিংহভাগ পশু হাসপাতালে সাধারণ অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু দুরন্ত ‘বিগল’-কে সে অস্ত্রোপচার করা ছিল ঝঞ্ঝাটের। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের অস্ত্রোপচার যত সহজে করা যায় সারমেয়র ক্ষেত্রে তা হয় না। সাধারণ অস্ত্রোপচারে স্টিচ করতে হয়। স্টিচ করা জায়গা নড়াচড়া করা বারণ। কিন্তু দুরন্ত বিগলকে তা কে বোঝাবে!’’ প্রায়শই স্টিচ ছিঁড়ে যায় তাদের। তাতে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হয়। শক্তিনাথ দে-র কন্যা জানিয়েছেন, অন্য কোনও উপায়ে ধাতব মিজরাবটা বের করা যায় কি না তার চেষ্টায় ছিলাম। অবশেষে অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথোলজি ল্যাবে আসেন তাঁরা।
২৪ দিন বয়সে এই পোষ্যকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল দে পরিবার। তাদের কাছে আদরের কুট্টুস সন্তানসম। এখানেই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন যেভাবে ছোট শিশুর শ্বাসনালি থেকে সেফটি পিন, পেনের ঢাকনা বের করা হয় সেই পদ্ধতিতেই সারমেয়র পেট থেকে বের করা হবে ওই ধাতব টুকরো। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘‘এন্ডোস্কপিক ফরেন বডি রিমুভাল একটি নন-সার্জিকাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি ফ্লেক্সিবল এন্ডোস্কোপ কুকুরের মুখ দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। এই নলের সামনে একটি ক্যামেরা থাকে।’’ চিকিৎসকের সামনে স্ক্রিনে দেখা যায় পেটের ভিতরের সম্পূর্ণ ছবি। এই পদ্ধতিতে সারমেয়র পেটের ভিতর থেকে বের করা হয় মিজরাব। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কুকুরের খাদ্যনালী, পাকস্থলী বা অন্ত্রে কিছু ফরেন বডি আটকে গেলে সমস্যা দেখা যায়। কুকুর মুখে কী দিল তা খেয়াল রাখবেন।
