অভিরূপ দাস: বেরচ্ছে তো বেরচ্ছেই, থামার নাম নেই! না, কলের জল নয় পিত্তথলির পাথর। একটা দু’টো নয়। ১০০-১৫০ও নয়। প্রায় হাজার ২০ পাথর বেরল পঞ্চান্ন বছরের তাপসী দাসের (নাম পরিবর্তিত) পিত্তথলি থেকে! চিকিৎসকরা বলছেন, পাথরের যা পরিমাণ এখনও পর্যন্ত কলকাতায় গলব্লাডার অস্ত্রোপচারে এই মহিলার পিত্তথলি থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পাথর বেরিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভুগছিলেন পেটের ব্যাথায়। ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলেই ব্যথা বাড়ত। আলট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে পিত্তথলির পাথর। কে জানত তা সংখ্যায় এত? সল্টলেক আইএলএস হাসপাতালে হয়েছে এই অস্ত্রোপচার। সার্জারির নেতৃত্বে ছিলেন ডা. মাখনলাল সাহা। তিনি জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই পাথর জমছিল পিত্তথলিতে। প্রথমটায় কোনও উপসর্গ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই অস্ত্রোপচারও করাননি। আস্তে আস্তে পাথর বাড়তে বাড়তে এত সংখ্যায় পৌঁছেছে। পাথরের সংখ্যা এতোই তা গুনতে রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে হাসপাতালের কর্মীদের।
মহিলার পিত্তথলি থেকে বেরল ২০ হাজার পাথর! নিজস্ব ছবি।
গলব্লাডার স্টোনের কারণ? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পিত্তরসে কোলেস্টেরল বেশি হলে তা জমে জমে পাথর হয়। গলব্লাডার যদি নিয়মিত খালি না হয় পিত্তরস ঘন হয়ে তা থেকেও পাথর হতে পারে। রক্তে বিলিরুবিন বেশি হলে গলব্লাডার স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গলব্লাডার স্টোন এড়াতে বেশি তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। ডা. মাখনলাল সাহা জানিয়েছেন, ল্যাপরোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! কুচো, মাঝারি, বড় মিলিয়ে তাতে পাথর ২০ হাজারের উপর। এতগুলো পাথর স্বাভাবিক? ডা. মাখনলাল সাহার কথায়, ''পাঁচ-দশটা পাথর আখছার দেখা যায়। কিন্তু হাজার কুড়ি পাথর অত্যন্ত বিরল ব্যাপার।'' ঘনঘন উপোস করা, অসময়ে খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টরল গলব্লাডার স্টোনের অন্যতম কারণ।
চিকিৎসকদের অনুমান, এসব নানা কারণেই পাথর হয়েছে ওই মহিলারও। যকৃতের নিচে ডানদিক ঘেঁষে থাকে পিত্তথলি। লিভার বা যকৃত দ্বারা উৎপাদিত অতিরিক্ত পিত্ত এই পিত্তথলিতে বা গলব্লাডারে এসে জমা হয়। গলব্লাডারে স্টোন হলে পেটের ডানদিকে অনুভূত হয় মারাত্মক ব্যাথা।
