অভিরূপ দাস: আশি লক্ষ টাকার প্রক্রিয়া বিনামূল্যে! বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন। সচরাচর বেসরকারি হাসপাতালেও যে প্রক্রিয়া হয় না। সরকারি তো কোন ছাড়! বাংলায় প্রথমবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হল ‘হোল লাং ল্যাভেজ’ প্রক্রিয়া। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ফুসফুসের শুশ্রূষার অত্যাধুনিক এই প্রক্রিয়া প্রমাণ করল দেশের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এগিয়ে বাংলা।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা অধীর সরকার (নাম পরিবর্তিত) চার বছর ধরে ভুগছিলেন। নাগাড়ে কাশি, হাজার ওষুধ খেয়েও অসুখ সারছিল না। শেষমেশ আসেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পালমোনারি মেডিসিন বিভাগে। পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ জয়দীপ দেব জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির ফুসফুসের প্রকোষ্ঠ বা অ্যালভিওলাইয়ে জমা হয়েছিল কিছু পদার্থ। বিপত্তি সেখানেই। অ্যালভিওলাই ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলি। শ্বাস নেওয়ার সময় অক্সিজেন এখানে পৌঁছয়। অ্যালভিওলাইয়ের পাতলা প্রাচীর দিয়ে অক্সিজেন রক্তের ক্যাপিলারিতে প্রবেশ করে। অ্যালভিওলাই কাজ না করায় শুরু হয় বিপত্তি। ওই ব্যক্তির ব্রঙ্কোস্কপি করা হয়। করা হয় বায়োপসি। দেখা যায় বিরলতম অসুখ পালমোনারি অ্যালভিওলার প্রোটিনোসিসে আক্রান্ত অধীরবাবু।
কার্ডিও অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শম্পা দত্তগুপ্ত জানিয়েছেন, ডিমের সাদা অংশের মতো কিছু প্রোটিনযুক্ত কণা প্রচুর পরিমাণে জমা হয়েছিল ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ে। এই অসুখ নির্ণয় করা যেমন জটিল। চিকিৎসা পদ্ধতিও অত্যন্ত দুর্বোধ্য। চূড়ান্ত ব্যয়সাধ্য এই প্রক্রিয়া অদ্যাবধি হয়নি বাংলায়। ডাঃ জয়দীপ দেবের কথায়, ‘‘যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ফুসফুসের মধ্যে যে পদার্থগুলো জমা হয়েছে, সেগুলো স্যালাইনের মাধ্যমে পরিষ্কার করতে হবে। তার জন্য সময়ও লাগবে অনেক।’’ মানুষের শরীরে দুটো ফুসফুস। এক্ষেত্রে একসঙ্গে নয়, দুটো ফুসফুসকে আলাদা আলাদা ভাবে পরিষ্কার করতে হয়।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিও থোরাসিক সার্জারি বিভাগের সহায়তায় চেস্ট মেডিসিন বিভাগ, কার্ডিও থোরাসিক অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগ সে অসাধ্য সাধন করতে নামে। এই প্রক্রিয়ার বিশেষত্ত্ব? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘‘গলায় অজ্ঞান করার জন্য একটি পাইপ প্রবেশ করানো হয়। সেই পাইপ দু্’ভাগে ভাগ হয়ে দুটো ফুসফুসে গিয়ে তারা কাজ করতে শুরু করে। সে প্রক্রিয়ারও একটি বৈশিষ্ট আছে। এক সঙ্গে দু’টো ফুসফুস বন্ধ রাখলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাই একটা ফুসফুসকে চিকিৎসকরা যখন পরিস্কার করেন। অন্যটিতে বাতাস চালনা করে রোগীকে জীবন্ত রাখা হয়।’’
এই কাজ করতে করতে দেখা যায়, রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। মোট ১৪ লিটার জল লেগেছে ফুসফুস পরিষ্কার করতে। ডাঃ পিকে জানা, ডাঃ সৌরিন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ সুকান্ত কোদালি, ডাঃ অনুপম পাত্র, ডাঃ স্বপ্নেন্দু মিশ্র, ডাঃ সুমন্ত ঝা, ডাঃ প্রিয়াঙ্কা রায়, ডাঃ অদিতি দাস ঘরাদের যৌথ চেষ্টায় সম্ভব হয়েছে এই প্রক্রিয়া। বাইরে এটি করতে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা খরচ। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে তা হয়েছে বিনামূল্যে।
