shono
Advertisement
Health Tips

হাঁটারও আছে নিয়ম, না জানলেই বিপদ, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর

কতটা হেঁটে থামতে হবে তা জানা খুবই জরুরি।
Published By: Suparna MajumderPosted: 04:38 PM Nov 27, 2024Updated: 04:38 PM Nov 27, 2024

অনেকটা পথ হাঁটার পর, আমরা একসময় টের পাই এই পথ ভুল। হাঁটা শরীরের পক্ষে ভালো, তবে বুঝে-শুনে। নাহলে সমস্যা হতে পারে। আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে ব্যথা আরও কত কী সঙ্গী হয়। কেমন হবে হাঁটার নিয়ম? অতিরিক্ত বেসামাল হাঁটাচলার খারাপ দিক জানিয়ে সাবধান করলেন এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক ডা. মুকুল ভট্টাচার্য

Advertisement

হাঁটুর ব্যথা এখন আমজনতার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে একটি যুবতী ওপিডিতে এল, বয়স মাত্র ২৭ বছর। তার নাকি এত কোমরে ও হাঁটুতে ব্যথা, উঠতেই পারছে না। এটা হঠাৎ করে নয়। প্রায় বছরখানেক ধরে চলছে এই অস্বস্তি। কিছুদিন রেস্ট নেয়, তারপর হাঁটাচলা শুরু করতেই আবার একই রকম পরিস্থিতি। নিত্য কি এক্সারসাইজ করেন? এটা জানতে চাইলে রোগী বলেন, ‌“হ্যাঁ ডাক্তারবাবু, আমি রোজ সকালে দেড় ঘণ্টা ও বিকালে দেড় ঘণ্টা হাঁটি।”

আসলে আমরা সবাই জানি, হাঁটা খুবই উপকারী। কিন্তু এটা ক’জন জানেন যে হাঁটা ভালো, কিন্তু সেটা যদি সঠিক সময় মেনে, সঠিক নিয়ম মেনে না করা হয় তা হলে কিন্তু ভালোর আড়ালে বিপদ আছে। কারণ হাঁটা মানে শুধু হাঁটা নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক কিছুই যুক্ত রয়েছে। কীভাবে হাঁটা হচ্ছে, কতক্ষণ, কখন, কী রকমভাবে - সব কিছুর উপর নির্ভর করবে হাঁটার উপকারিতা। তাই এমন অনেকেই আসেন বিশেষত আজকাল হাঁটুর সমস্যা যেভাবে সবার সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাতে করে এটা ঠিকই যে, নিত্য হাঁটাচলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে হাঁটুর ভালো-মন্দ। আর্থ্রাইটিসের সমস্যা তাই এত বাড়ছে। ৩৫ বছর পেরলেই হাঁটু-কোমরে ব্যথা শুরু হচ্ছে।

খারাপ, যদি নিয়ম না মানা হয়
রোজ হাঁটা শরীরের জন্য ভালো কিন্তু বেশি হাঁটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারণ। অস্টিওআর্থ্রাইটিস রিসার্চ সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালের তথ্য, সঠিক নিয়মে না হাঁটা ও বেশি সিঁড়ি ভাঙা অস্টিওআর্থাইটিসের অন্যতম কারণ।
অনেকের ধারণা সাধারণত ঘরের কাজ করা, বাইরে কাজ করা, রোজ অফিস যাওয়া এসব ক্ষেত্রে আমাদের যে পরিমাণ হাঁটাচলা হচ্ছে তাতেই হয়তো উপকার হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু সাধারণ হাঁটা। উপকার নগণ‌্য।
আসলে উপকার পেতে ব্রিস্ক ওয়াকিং বা জোরে হাঁটা দরকার। অর্থাৎ ৩-৬ হাজার স্টেপ দ্রুতগতিতে হাঁটা। টানা একবারে হাঁটতে না পারলে সকালে কিছুক্ষণ ও বিকালে কিছুক্ষণ ব্রিস্ক ওয়াকিং করা যেতে পারে। তবে ব্রিক্স ওয়ার্কিং-এর সঠিক পদ্ধতি জানেন না বলেই হাঁটার পরও হাঁটুব্যথা কমার বদলে বাড়ছে।

সাধারণত সুফল পাওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বা সকালবেলা ১ ঘণ্টা হাঁটা দরকার। তার মধ্যে ভাগ করে নিতে হবে এইভাবে---
প্রথম ১৫ মিনিট সাধারণ গতিতে হাঁটুন, তার পর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান। আমরা সাধারণত ঘাম হতে শুরু করলে মনে করি হেঁটে উপকার হচ্ছে, তারপর হাঁটা থামিয়ে দিই। এটা নয়, হাঁটার ক্ষেত্রে ঘাম হতে শুরু করার পর আরও ২০-৩০ মিনিট হাঁটলে তবেই উপকার মিলবে। তারপর ধীরে ধীরে গতি কম করে আরও কিছুক্ষণ বা ১০-১৫ মিনিট হেঁটে, হাঁটা থামাতে হবে। এই পদ্ধতি অনেকেই মানেন না। তখনই হিতে-বিপরীত হয়।

শুরুতেই খুব জোরে হাঁটতে শুরু করেন, দ্রুত ওজন কমাবেন বলে অনেকক্ষণ ধরে হাঁটেন এবং ভুল গতিতে হাঁটেন। ভুল নিয়মে অতিরিক্ত হাঁটলে হাঁটুর মধ্যে একটা আঘাত তৈরি হয়। ফলে হাঁটুর চারিদিকে একটা রস জমতে থাকে। যা একটা ইনফ্লেমেটারি বা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে ও শরীরের কিছু খারাপ পদার্থ হাঁটুতে জমা হতে থাকে। তা থেকে হাঁটুর কার্টিলেজ ড্যামেজ হতে শুরু করে। আর সঠিক নিয়মে হাঁটলে দেখা গিয়েছে হাঁটুর সমস্যা প্রায় ১৫ শতাংশ কমিয়ে রাখা সম্ভব। আর উলটো হলে ১২ শতাংশ হাঁটুর সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। হাঁটা ও একজনের ওজন, উচ্চতা ও বিএমআই-এর উপর নির্ভর করে হাঁটার ভালো-মন্দ।

যখন ভালো
তবে সব ঠিক থাকলে হাঁটার উপকার তো আছেই। প্রত্যেকটি জয়েন্টে ফ্লুইড (সাইনোভিয়াল ফ্লুইড) ও কার্টিলেজ (আর্টিক্যুলার) থাকে। যখন একজন হাঁটেন তখন জয়েন্টের মুভমেন্ট হয়। ফলে ফ্লুইডের সার্কুলেশন বেড়ে যায়। কার্টিলেজগুলি এই ফ্লুয়িডের দ্বারা ধুয়ে যায় বা পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে কার্ডিলেজগুলি অনেক বেশি সক্রিয় ও ভালো অবস্থায় ফিরে যায়। জয়েন্টের নিউট্রিশন বেড়ে যায়।

শুধু জয়েন্টেই নয়, এর পাশে থাকা সমগ্র পেশিই সচল ও শক্তিশালী হয়। এছাড়া হাঁটার সঙ্গে ক্যালোরিও বার্ন হয়। হাঁটা সব সময় যে শুধুমাত্র হাঁটুর ব্যায়াম তা কিন্তু নয়, এটা সমগ্র শরীরের এক্সারসাইজ। সমগ্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এর সুপ্রভাব পড়ে। পায়ের গোড়ালি, ছোট ছোট জয়েন্ট, হাঁটু, কোমর, শিরদাঁড়া, ঘাড় ও কাঁধের মুভমেন্ট হাঁটার মাধ্যমে সচল থাকে।

উপকার পেতে যেগুলি মানবেন
নিত্য সকালে বা সন্ধ্যায় টানা হাঁটুন নিয়ম মেনে। সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে হাঁটায় উপকার নেই।
অতিরিক্ত সিঁড়ি ভাঙা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা হাঁটুর ক্ষয় বাড়ায়।
টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিচে বসে কাজ করে যাওয়া ঠিক নয়। এতে করে হাঁটু সোজা করতে না পারলে হাঁটুর ক্ষতি হতে শুরু করে। এমনকী, যাঁরা টেবিলে কাজ করেন চেয়ারে বসে, তাঁরা যদি পা-টাকে ভাঁজ করে বসেন তাতে ক্ষতি। যতটা সম্ভব সোজা করে বা পা ছড়িয়ে চেয়ারে বসে কাজ করতে হবে। অর্থাৎ খুব অল্পমাত্রায় বা ১০-১৫ ডিগ্রিতে ভাঁজ করে হাঁটুটা রাখলে উপকার। টানা তিন ঘণ্টা বসে কাজ করছেন, এমন হলে মাঝেমধ্যেই পায়ের গোড়ালি ঘুরিয়ে বসে বসেই ব্যায়াম করে নিতে হবে। এটা জয়েন্টে ফ্লুয়িডের সার্কুলেশন বাড়ায়। ভালো থাকে।
সস্তার জুতো না পরে ভালো জুতো সব সময় পরুন। একদম ফ্ল্যাট জুতো না পরে হালকা হিল থাকবে ও নরম জুতো পরাই শ্রেয়। মর্নিং ওয়াকের জন্য স্পোর্টস শু উপকারী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • হাঁটা ভালো, কিন্তু সেটা যদি সঠিক সময় মেনে, সঠিক নিয়ম মেনে না করা হয় তা হলে কিন্তু ভালোর আড়ালে বিপদ আছে।
  • কারণ হাঁটা মানে শুধু হাঁটা নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক কিছুই যুক্ত রয়েছে।
Advertisement