সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাঁপানি বা অ্যাজমা। অত্যন্ত কষ্টদায়ক এক ব্যাধি। রোগীর মধ্যে এর উপসর্গ তীব্র ভাবে দেখা দিলে চরম ভোগান্তি তৈরি হয়। আর তাই, রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বেছে নেন স্টেরয়েড চিকিৎসা। প্রতিদিন স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়া অনেকেরই রোজনামচার মধ্যে পড়ে। কিন্তু এবার সেই কঠিন নিয়মে ছেদ আসতে চলেছে। এক নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি জোগাচ্ছে আশার আলো। এখন একটি মাসিক ইনজেকশনের সাহায্যেই এই কঠিন রোগকে বশে আনা সম্ভব।
অ্যাজমা একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা। ভারতে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এটি বিশ্বের মোট অ্যাজমা রোগীর প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৪.৬ লক্ষ মানুষ অ্যাজমায় মারা যান। এর বড় অংশীদার ভারত। ২০ বছরের বেশি মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি।
এই পরিস্থিতিতে একটি মাসিক ইনজেকশন নিয়ে আশা জাগছে। এই ওষুধের নাম হল টেজপেলুমাব (Tezepelumab)। এটি এক ধরনের অ্যান্টিবডি চিকিৎসা। এটি ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে লক্ষ্য করে কাজ করে। এই ওষুধ প্রদাহকে দূর করে। এতে অ্যাজমার উপসর্গ কমে। হাঁপানির কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়। অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
সম্প্রতি কিং'স কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা একটি বড় আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালান। এক বছর ধরে রোগীদের প্রতি চার সপ্তাহে এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। ফলাফল আশার আলো দেখিয়েছে। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি রোগী স্টেরয়েড ট্যাবলেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। এতে তাঁদের কারও কোনও অসুবিধা হয়নি। অ্যাজমার কোনও উপসর্গ নতুন করে কাবু করেনি। বরং প্রত্যেকেই সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন।
অ্যাজমা প্রতিরোধে যে স্টেরয়েড ট্যাবলেট রোগীরা খান, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। তাছাড়া স্টেরয়েড সাময়িকভাবে রোগের উপসর্গ সামলায়। কিন্তু দীর্ঘ ব্যবহারে হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে। কিন্তু এই নয়া ইনজেকশনে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।
ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর কোনও অ্যাজমা অ্যাটাক হয়নি। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগী দ্রুত সুস্থ হতে শুরু করেন। ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হতে দেখা গিয়েছে। এক বছর ধরে এই ইনজেকশন ব্যবহার করে দিব্যি সুস্থ থেকেছেন রোগীরা। খারাপ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও দেখা মেলেনি।
চিকিৎসকরা এই প্রয়াসকে 'গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি টার্গেটেড থেরাপি বা বায়োলজিক চিকিৎসা। টেজপেলুমাব অ্যাজমার চিকিৎসায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। স্টেরয়েডের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
