বর্তমানে যেমন হার্টের ব্লক খুলতে উন্নতমানের স্টেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনই হার্টের ব্লক ধরতেও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যত স্বচ্ছ হবে ধমনির কোথায় ব্লক, ততই সফল হবে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। নতুন এই চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়েই জানাচ্ছেন কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবদত্ত ভট্টাচার্য।
শরীরের অলিগলিতে জটিলতা লুকিয়ে থাকলে তা লক্ষণ দেখে বুঝতে পারলেও শেষ কথা বলে মেডিকেল টেস্ট। তাই যে কোনও জটিল অপারেশনের আগে শরীরের অভ্যন্তরীণ ছবি নেওয়া খুব জরুরি। এই ভাবেই চিকিৎসকের বিচার-বিবেচনা এগোতে থাকে।
হার্টের সমস্যা আরও জটিল। সূক্ষ্ম শিরা, ধমনীর কোথায় আসলে অসুবিধা সেটা সর্বপ্রথম নির্ণয় করা দরকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার্টের ধমনীতে ব্লকেজ হয়েছে শোনা যায়। সমাধান স্টেন্ট বসিয়ে ব্লক খুলে দেওয়া। তবে সর্বপ্রথম আর্টারি বা ধমনীর ঠিক কোথায় সেটা বসানো হবে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এটা চিহ্নিত করে হবহু মিলিয়ে দিতে পারলে রোগীর অপারেশন সফল। পরবর্তী জটিলতাও প্রায় নেই বললেই চলে। এতদিন এই আগাম ছবিটা ততটা স্বচ্ছ পাওয়া যেত না। বর্তমানে আশা দেখাচ্ছে নয়া পদ্ধতি OCT। এই পদ্ধতিতে পাওয়া ইমেজের ভিত্তিতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এখন অনেক সফল।
এতদিন কী করা হত?
এতদিন অ্যাঞ্জিওগ্রাফির দ্বারা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হত। অ্যাঞ্জিওগ্রাফির মাধ্যমে ধমনীতে কোথায় ব্লকেজ আছে সেটা দেখে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হত। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আর্টারিয়াল ব্লকেজ ধরা পড়লেও এর প্রকৃতি কেমন সেটা জানা যেত না। বর্তমানে অপটিক্যাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফির (OCT) সাহায্যে ধমনীর কোথায় কী ধরনের ময়লা জমেছে তার সঠিক রূপ নির্ণয় করা যায়। ফলে স্টেন্ট বসানো আরও সহজ হয়ে গিয়েছে।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার সময় এতদিন যে পদ্ধতি অবলম্বন করে ছবি পাওয়া যেত, সেটা দেখে স্টেন্ট বসানোর সময় কিছুটা ছবির ভিত্তিতে ও অনেকটাই অনুমানের ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। ফলে ধমনীর যে অংশে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা ব্লকেজ হয়েছে সেটা স্পষ্টভাবে যদি বোঝা না যায় তবে স্টেন্ট বসানো হলেও সেটা পুরোপুরি খোলে না। আর স্টেন্ট পুরোপুরি ভাবে না খোলার কারণে সেই স্টেন্টে পুনরায় ব্লকেজ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। স্টেন্টে রক্ত জমাট বেঁধে স্টেন্ট থ্রম্বোসিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। কিন্তু এই ধরনের ব্লকেজ ধরতে বা চিহ্নিত করতে যদি OCT-পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হলে আরও ভালোভাবে জানা যায় সব কিছু। যে ব্লক হয়েছে সেটা কী ধরনের ব্লক, ঠিক কোন স্থানে আছে, কতটা ব্লকেজ ইত্যাদি। ফলে এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা স্টেন্ট বসানো অনেক নিখুঁতভাবে করা সম্ভব।
এই টেস্টটি করার সময় বিশেষ ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয়। যেটা লাইট বা আলো প্রদান করে ধমনীর মধ্যে। এর দ্বারা পুরো আর্টারি বা ধমনীটির ছবি পাওয়া যায়। খুব সূক্ষ্ম যে সব ব্লকেজ রয়েছে আর্টারিতে ও তাতে ক্যালশিয়াম, ফ্যাট, ফাইবারের পরিমাণ কত, ব্লক শক্ত নাকি কঠিন-এই নয়া ইমেজিং তা বলে দেয়। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে কোন যন্ত্র ব্যবহার করে ব্লক পরিষ্কার করা যাবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। ইমেজ গাইড করে, স্টেস্টটা ধমনীর যেখানে বসবে সেই জমিটা ঠিক আছে কি না সেটা বুঝতে। তা হলে স্টেন্ট বসানোর পর তা সম্পূর্ণ খোলে ভিতরে গিয়ে। চিকিৎসা বহুগুণে সফল হয়। এই আধুনিক OCT-র দৌলতে দশ বছর আগে যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হত এখন তার আমূল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
আগে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি পরবর্তী পুনরায় ব্লকেজের সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশি, এখন তা প্রায় নেই বললেই চলে, মাত্র ১-২ শতাংশ। এর চেয়ে ভালো আর কিছু হয়? তাই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার আগে দেখে নিন হাসপাতালে OCT-র সুবিধা আছে কিনা।
পরামর্শ: 9832157514
