স্টাফ রিপোর্টার: এখনও যে ভূমিষ্ঠ হয়নি, মায়ের জঠরে, তারও কিডনির অসুখের তত্ত্ব-তালাশ করা যাবে। অত্যাধুনিক সে সব টেস্ট শুরু হচ্ছে সরকারি ক্ষেত্রেও। শনিবার ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি (ইস্টার্ন জোন), ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল। 'বিরল কিডনির অসুখ এবং তার সচেতনতা' শীর্ষক সে আলোচনা সভায় হাজির হয়েছিলেন শহরের তাবড় কিডনি অসুখ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, শিশুদের কিডনির অসুখের আশি শতাংশই বংশানুক্রমিক। নেপথ্যে জিনগত কারণ। চিকিৎসকরা এদিন জানিয়েছেন, সন্তানসম্ভবার অ্যান্টি-নেটাল স্ক্যানে ধরা পড়ে জঠরের শিশুর কিডনির অসুখ। সাধারণত ২২ সপ্তাহের প্রেগনেন্সিতে সেই স্ক্যান করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত গ্রামেও সন্তানসম্ভবার এই স্ক্যান করাতেই হবে।
এদিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আইপিজিএমইআর, 'সেন্টার অফ এক্সেলেন্স'-এর নোডাল অফিসার ডা. সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এখন বাংলায় সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বিরল কিডনির অসুখ নিয়ে আসা প্রান্তিক পরিবারগুলিকে সাহায্য করা হচ্ছে। বংশানুক্রমিক কিডনির অসুখ ধরতে সিওই বা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স-এ বিনামূল্যে কিছু টেস্ট করা হচ্ছে। যাতে নির্ধারণ করা যায় আগামী দিনে শিশুর কিডনির অসুখ হতে পারে কি না। জেনেটিক কিডনি ডিজঅর্ডারের রোগীদের বেশ কিছু ওষুধ দরকার হয় সেগুলি বহুমূল্য। ডা. সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'ন্যাশনাল পলিসি ফর রেয়ার ডিজিজ' বা এনপিআরডি প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র কিডনি নয়। সমস্ত বিরল রোগের ক্ষেত্রেই এই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সদ্যোজাতর কি আগামী দিনে কিডনির অসুখ হতে পারে? তা জানতে 'বেসিক জেনেটিক টেস্ট' শুরু হয়েছে এসএসকেএমে।
আলোচনাসভায় উপস্থিত ডা. রাজীব সিনহা, ডা. প্রতীক দাস, ডা. সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়, ডা. কৌশিক মণ্ডল, ডা. রাজীব আগরওয়াল, অভিষেক চক্রবর্তী, পার্থ রায়, পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি (ইস্টার্ন জোন)-র সম্পাদক ডা. প্রতীক দাস জানিয়েছেন, পরিবারের কারও কিডনির অসুখ থাকলে নতুন প্রজন্মেরও হতে পারে কিডনির সমস্যা। জিনের মধ্যে বংশপরম্পরায় কিছু রোগ চলে আসে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও। দেখা গিয়েছে, বাবার কিডনির অসুখ। সবাই ভাবলেন, ডায়াবেটিস থেকে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যাচ্ছে, ছেলেরও কিডনির সমস্যা হয়েছে। হবু মায়ের জঠরের সন্তানের কিডনির সমস্যা হতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে এস এস কে এমে। ডা. সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রথম সন্তানের কিডনির সমস্যা। পরবর্তী প্রেগনেন্সিতেও সেই সমস্যা আসতে পারে কি না তা দেখার জন্য সেন্টার অফ এক্সেলেন্স-এ মেডিক্যাল জেনেটিসিসরা আছেন। কী ধরনের 'জেনেটিক টেস্ট' করতে হবে? কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সাহায্য করা হয় পরিবারগুলিকে। কিছু জেনেটিক টেস্ট এই মুহূর্তে এস এস কে এমেই হচ্ছে। কিছু করা হচ্ছে বাইরে।
শিশুদের কিডনির অসুখ আশি শতাংশই জেনেটিক। শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের বিভাগীয় প্রধান ডা. রাজীব সিনহার কথায়, "জন্মগতভাবে কিডনির গঠন সঠিক নয়। কিডনির কাজ করার রাস্তা ঘোরালো প্যাঁচালো। এগুলি সবই দেখা যাচ্ছে জিনগত। এছাড়াও জিনগতভাবে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমও থাবা বসায় শিশুর শরীরে। অ্যান্টি-নেটাল স্ক্যানে ধরা পড়ে কিডনির অসুখ। অনেক সময় পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাদু-ঠাকুরমার কারও কিডনির অসুখ ছিল কি না। দেখা গিয়েছে, দ্রুত রোগ নির্ধারণ করা গেলে চিকিৎসা শুরু করা যায় তাড়াতাড়ি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. কৌশিক মণ্ডল, ডা. রাজীব আগরওয়াল, অভিষেক চক্রবর্তী। সকলেই একমত, জেনেটিক টেস্টিং নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
