সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শরীর অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। ডাক্তার দেখিয়ে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু ওষুধ কিনতে গিয়েই গ্যাঁড়াকলে পড়তে হল! ডাক্তারের হাতের লেখা পড়তে পারছেন না স্বয়ং ফার্মাসিস্ট! আমার আপনার কথা নাহয় বাদই দিলাম। প্রেসক্রিপশন পড়তে না পেরে সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অনেক সময় এই অস্পষ্ট হাতের লেখা বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই রোগীর ভোগান্তি কমাতে এবং চিকিৎসায় স্বচ্ছতা আনতে এবার বড় পদক্ষেপ নিল ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (NMC)। এখন থেকে দেশের প্রতিটি ডাক্তারকে স্পষ্ট এবং পাঠযোগ্য হস্তাক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে। এমনটাই নির্দেশ দিলেন এনএমসি।
কেন এই কড়া নির্দেশ?
মূলত ভুল ওষুধ এবং ভুল ডোজের কারণে রোগীর স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়, তা রুখতেই এই নয়া সিদ্ধান্ত। এমনকী পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি মামলায় স্পষ্ট জানিয়েছে যে, পরিষ্কারভাবে প্রেসক্রিপশন লেখা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী 'স্বাস্থ্যের অধিকার'-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভুল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
১) ডাক্তারদের এমনভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে যেন কোনও অস্পষ্টতা না থাকে। ওষুধের নাম ও তা খাওয়ার নিয়ম স্বচ্ছ ভাবে জানাতে হবে।
২) প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি করে সাব-কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখবে।
৩) হবু ডাক্তারদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং-এর সময় থেকেই স্পষ্ট করে লেখার গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হবে।
৪) অস্পষ্ট লেখার কারণে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে তার দায় নিতে হবে।
রোগীদের জন্য কেন এই স্বচ্ছতা?
১) অনেক ওষুধের নাম শুনতে বা দেখতে প্রায় একই রকম হয়। স্পষ্ট লেখা থাকলে ওষুধের দোকানদার ভুল ওষুধ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না।
২) ওষুধের পাওয়ার ১০ বা ১০০ গুণ বেশি হয়ে গেলে তা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। স্পষ্ট নির্দেশিকা এই ঝুঁকি কমায়।
৩) প্রেসক্রিপশন পড়তে পারলে রোগী নিজেই বুঝতে পারবেন তিনি কী খাচ্ছেন। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৪) ভুল ওষুধের কারণে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খরচ ও শারীরিক কষ্ট থেকে রোগীরা রেহাই পাবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, ভুল ওষুধ সেবন বিশ্বজুড়ে একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। এনএমসি-র এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও নিরাপদ করে তুলবে।
