সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: আর্থিক প্রতারণার দায় চেপেছে মেয়ের কাঁধে। সহ্য করতে হচ্ছে অপমান। তা আর মেনে নিতে না পেরে ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) চলাকালীন বকখালিতে একই পরিবারের তিন সদস্যের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এখনও চলছে জোর আলোচনা। আত্মঘাতীদের দাবি, মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে। যদিও স্থানীয়রা বলছেন অন্য কথা। আর্থিক প্রতারণা যে মেয়ে করেছে তা বুঝতে পারার পরই আত্মহত্যা বলেই দাবি এলাকাবাসীর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানার হাঁড়া নস্করপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল নস্করের মেয়ে পুনম। সুলতানপুরে শ্বশুরবাড়ি তাঁর। ‘সুলতানপুর মা তারা মহিলা’ নামে একটি স্বনির্ভর দল চালাতেন তিনি। পুনম-সহ মোট ১৩ জন সদস্য রয়েছেন এই দলটিতে। প্রায় চার বছর ধরে চলছে স্বনির্ভর দলটি। টাকা ব্যাংকে দিয়ে আসার কাজ করতেন পুনম। প্রতি মাসে ১২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে তোলা হত। সেই টাকাও ব্যাংকে ফেলে আসার দায়িত্ব ছিল তাঁর। তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা জানতে পারেন, এক পয়সাও ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়নি।
[আরও পড়ুন: নতুন পদ্ধতিতে ব্যাংক জালিয়াতি জামতাড়া গ্যাংয়ের, লক্ষাধিক টাকা খোয়ালেন অধ্যাপক]
ওই স্বনির্ভর দলের সদস্যদের দাবি, কাউকে কিছু না জানিয়ে ২০১৭ সালে দেড় লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন পুনম। মাসছয়েক আগে আবার লোন নেন। এবার আরও ১ লক্ষ টাকা। বিষয়টি পুনমকে জানান তাঁরা। তাতে নাকি বেজায় চটেও গিয়েছিলেন। পুরোপুরি অভিযোগ উড়িয়ে দেন। ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের সঙ্গে ঝগড়াঝাটিও হয় পুনমের। তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দাবি, তা পুরোটাই ছিল লোক দেখানো। প্রতারণার বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই এহেন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন পুনম। অভিযোগ, এরপর পুনম এবং তাঁর স্বামী মিঠুনের উপর ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অত্যাচার আরও বাড়তে থাকে। কোমরে দড়ি বেঁধে গোটা এলাকায় ঘোরানোও হয় তাঁদের।
রবিবার ফেসবুক লাইভে সেকথা উল্লেখ করেছিলেন পুনমের ভাই। তাঁর দাবি, দিদিকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। ব্যাংকের ম্যানেজার এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্যই আদতে টাকা আত্মসাৎ করেছে। মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবা-মাকে নিয়ে বকখালিতে (Bakkhali) পালিয়ে যান ওই যুবক। শেষমেশ আত্মহত্যা করেন তিনি। এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল, ডায়মন্ড হারবার ও কুলপি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় ধৃত ৫ মহিলাকে এদিন আদালতে তোলা হয়। তাদের ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এই ঘটনার পর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না পুনম, তাঁর স্বামী এবং সন্তানের। প্রত্যেকের খোঁজ চলছে।