সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল, জৈব সুরক্ষা বলয় কিংবা বায়ো বাবল। যা আরব আমিরশাহী আইপিএলেও (IPL) থাকবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বোর্ড বলে দেবে পুরো মডেলটা কী? কিন্তু কী এই জৈব সুরক্ষা বলয়? কী তার শর্ত? দেখে নেওয়া যাক…
সম্প্রতি ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে টেস্ট সিরিজটা হয়েছে, পুরোটাই হয়েছে এ হেন সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে। যেখানে এমন সব বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছিল যাতে ক্রিকেটারদের করোনা সংক্রমণের কোনও সম্ভাবনাই না থাকে। বহু বিধিনিষেধকে জুড়ে জুড়ে একটা নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা কবচ। আসন্ন আইপিএলেও যে ছবি দেখা যাবে।
কী থাকবে জৈব সুরক্ষা বলয়ে?
ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি: জৈব সুরক্ষা বলয় সৃষ্টির প্রথম শর্তই হল প্লেয়ারদের গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ আনা। একবার এই সুরক্ষা বলয়ে কেউ ঢুকে পড়লে কেউ তা ছেড়ে বেরোতে পারবেন না। পুরোটাই করা যাতে কোনও করোনা রোগীর সংস্পর্শে ক্রিকেটাররা না আসেন। এক্ষেত্রে মাঠ সংলগ্ন হোটেলে ক্রিকেটারদের রাখা হয়। আমিরশাহী আইপিএলে এত কড়াকড়ি সম্ভব নয়। কারণ, প্রথমত যে তিনটে মাঠে আইপিএল খেলা হবে, তার কোনও সংলগ্ন হোটেল নেই। তা ছাড়া আমিরশাহীতে পর্যটন শুরু হয়ে যাওয়ায়, সুরক্ষা বলয়ে কতটা কড়াকড়ি সম্ভব, সন্দিহান বোর্ডের (BCCI) ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ।
[আরও পড়ুন: আইপিএল ১৩ আয়োজনে সবুজ সংকেত দিল কেন্দ্র, জেনে নিন ফাইনাল ম্যাচের দিনক্ষণ]
পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নয়: এটা সুরক্ষা বলয়ের দ্বিতীয় শর্ত। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকাকালীন ক্রিকেটাররা পরিবার, অতিথি, বন্ধু-বান্ধব কারও সঙ্গেই দেখা করতে পারবেন না। হোটেল ছেড়ে বেরেনো যাবে শুধুমাত্র মাঠে যাওয়ার সময়, ব্যস। আর একবার নির্দেশ অমান্য করে এ হেন সুরক্ষা বলয় ভাঙলে কপালে ভাল রকম শাস্তি আছে। উদাহরণ, ইংল্যান্ড পেসার জোফ্রা আর্চার। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের শেষে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন সুরক্ষা বলয় ছেড়ে। যার ফলে শুধু দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে বাদ পড়তে হয়নি, দু’বার নতুন করে করোনা পরীক্ষাও দিতে হয়েছিল। যতদূর যা শোনা যাচ্ছে, আইপিএলে এতটা কঠিন শর্ত না হলেও বোর্ড কিছু কিছু শর্ত বেঁধে দেবে যার নীচে নামা যাবে না। যেমন, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা ক্রিকেটারদের পরিবারকে নিয়ে এলে তাঁদেরও জৈব সুরক্ষা বলয় বিধি মেনে চলতে হবে। যেমন, ভিড়ভাট্টায় থাকা যাবে না। যতটা সম্ভব ক্রিকেটারদের সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বলে দেওয়া হবে, তারা চাইলে এ হেন কড়াকড়ি আরও বাড়াতেই পারে।
বাধ্যতামূলক নিভৃতাবাস: জৈব সুরক্ষা বলের এটাও একটা অংশ। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও সফরকারী ক্যারিবিয়ান টিমকে ইংল্যান্ডে নেমে বাধ্যতামূলক চোদ্দো দিনের নিভৃতাবাসে যেতে হয়েছিল।আমিরশাহীতে (UAE) আইপিএল টিমগুলো আগেভাগে চলে যাচ্ছে। দু’টো কারণ। এক, পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস করা। দুই, নির্দিষ্ট নিভৃতাবাসবিধি কিছু থাকলে তা মানা। যতটুকু যা জানা যাচ্ছে, ভারত থেকে কোনও ক্রিকেটার করোনা নেগেটিভ হয়ে ফ্লাইট ধরলে এবং দুবাইয়ে নেমে ফের করোনা নেগেটিভ হলে, তাকে চোদ্দো দিনের নিভৃতাবাসে থাকতে হবে না। তবে দুবাই এরায়পোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গে ‘ডিএক্সবি’ অ্যাপ নামক সে দেশের এক স্বাস্থ্য অ্যাপ সবাইকে ফোনে নিয়ে নিতে হবে, সেটা শোনা গেল।
[আরও পড়ুন: কোহলিদের মতোই আমিরশাহীতে আইপিএল খেলবেন হরমনপ্রীতরাও, নিশ্চিত করলেন সৌরভ]
ফাঁকা স্টেডিয়াম, ক্রিকেটারদের জন্য আলাদা যাতায়াতের পথ: এটা আর একটা শর্ত। মাঠ ফাঁকা করে খেলা। ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজে মাঠে কোনও লোক ছিল না। আমিরশাহী আইপিএলেও অন্তত প্রথম দিকে কোনও দর্শক থাকবেন না। পরের দিকে কিছু দর্শক আনা হবে কি না, সে দেশের সরকারের বিবেচনা। তবে ক্রিকেটারদের যাতায়াতের জন্য আলাদা পথ রাখতে হবে, যাতে কারও সংস্পর্শে তাঁরা না আসেন।
রিমোট কমেন্ট্রি ও সংযোগবিহীন আম্পায়ারিং: ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে মাঠেই আম্পায়ারিং হয়েছে। কিন্তু আইপিএলের স্টুডিও কমেন্ট্রির অনেকটাই বাড়ি থেকে হতে পারে। মাঠে যাঁরা থাকবেন কমেট্রি বক্সে তাঁদেরও নিজেদের মধ্যে ছ’ফুট দূরত্ব রাখতে হবে বলে খবর। দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ড সিরিজে ক্রিকেটাররা আম্পায়ারকে সোয়েটার, টুপি গিয়ে দিতে পারতেন না। সেটা আইপিএলেও হতে পারে।
রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এ হেন সুরক্ষা বলয় নিয়ে। দ্রাবিড় প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, খেলার মঝে কারও করোনা ধরা পড়লে কী হবে? অতএব, এটা যে নিশ্ছিদ্র বন্দোবস্ত তা নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে এটাই সেরা বিকল্প। তা ছাড়া বোর্ড আইপিএলের সময় প্রতি দু’সপ্তাহে ক্রিকেটারদের চার বার করোনা পরীক্ষা, ড্রেসিংরুমে ১৫ জনের বেশি নয়, এ হেন কিছু শর্ত দিতে পারে।
The post করোনা রুখতে আইপিএলে বিশেষ ব্যবস্থা, কী কী নিয়ম মানবেন ক্রিকেটাররা? appeared first on Sangbad Pratidin.