গৌতম ভট্টাচার্য: ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দু’য়েক আগে মাঠের বাইরে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। লন্ডন থেকে এসেছেন। প্রবাসী ভারতীয়। রোহিত শর্মার বড় ভক্ত। সবাই যখন বিরাট…ধোনি করে চিৎকার করে যাচ্ছেন, তখন সেই ভদ্রলোক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে গেলেন, “দেখবেন আজ রোহিত সেঞ্চুরি করবে। আর ম্যাচের পর আপনার সঙ্গে আবার কথা হবে।”
[আরও পড়ুন: একটা ফোন বদলে দিয়েছিল জীবন, চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি শচীনের]
না, ম্যাচের পর তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। দেখা হলে নির্ঘাত কলার-টলার তুলে বলতেন, “কী? দেখলেন তো।” ঘটনা হল, সাউদাম্পটনে বিরাট কোহলির আউট হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় সমর্থকদের মধ্যে যেটুক দুশ্চিন্তার মেঘ দেখা গিয়েছিল, সব এক লহমায় সরিয়ে দিয়ে গেলেন রোহিত। ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্টার চ্যানেলে ভিভিএস লক্ষ্মণ রোহিতের ইনিংসটা বিশ্লেষণ করছিলেন। লক্ষ্মণ বলছিলেন, “এটা নিয়ে ওয়ান ডে’তে ২৩ তম সেঞ্চুরি করল রোহিত। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই সেঞ্চুরি ওকে বাড়তি তৃপ্তি দেবে। এটা টিপিক্যাল রোহিত-সুলভ ইনিংস নয়। ও শুরু থেকেই শট খেলতে পছন্দ করে। অনেকটা ফ্ল্যামবয়েন্ট টাইপ ক্রিকেট খেলে। কিন্তু এখানে সেটা খেলেনি। শুরুর দিকে কন্ডিশন বেশ কঠিন ছিল। রোহিত সেটা বুঝেশুনে পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে গেল। পঞ্চাশের পর তারপর সেই পুরনো রোহিত। শট খেলল। সবচেয়ে ভাল লাগল এটা দেখে যে, শেষপর্যন্ত উইকেটে থেকে ম্যাচ শেষ করে এল।”
ভারতীয় শিবিরও এখন রো-হিটে আচ্ছন্ন। ম্যাচ শেষে দেখলাম বিরাট কোহলি মাঠে চলে এল। ছাই রঙের আপার। এসেই রোহিতকে জড়িয়ে ধরলেন। সত্যিই তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২২৭ রানে আটকে রাখার পরও জয়টা সহজে আসত না, যদি রোহিত অমন একটা ইনিংস না খেলতেন। রোহিত নিজেও প্রচণ্ড খুশি। ম্যাচ শেষে বলছিলেন, “পিচে বোলারদের জন্য সবসময়ই কিছু না কিছু ছিল। তাই আমি আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারিনি। অনেক শট আমি মারিনি, সাধারণত যা মেরে থাকি। নিজের অনেক শট আজ আমাকে কাটছাঁট করতে হয়েছিল। টিপিক্যাল রোহিত শর্মা ইনিংস খেলিনি। তবে কাজটা কিন্তু শেষ করে এসেছি।”
[আরও পড়ুন: ধোনি বা কোহলি নন, সৌরভকেই সেরা অধিনায়ক বাছলেন সন্দীপ পাটিল]
অবশ্য শুধু রোহিত একা নন। স্বস্তির আরও অনেক কারণ রয়েছে। জসপ্রীত বুমরাহ কেন এখন বিশ্বের এক নম্বর বোলার, সেটা আবার দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। দুই রিস্ট স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল আর কুলদীপ যাদবও বেশ ভাল বল করলেন। কুলদীপ আইপিএলে ফর্ম হারিয়েছিলেন। ম্যাচের আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে বিরাটকে সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল। ভারতীয় ক্যাপ্টেনের উত্তর ছিল, আইপিএল আর বিশ্বকাপ এক নয়। সেটা দেখাও গেল। একটা উইকেট পেলেও বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেছেন। সবমিলিয়ে ভারতীয় দল ঠিক যেভাবে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে চাইছিল, সেভাবেই হল।
তবে ভারতীয় শিবির এসব নিয়ে আর পড়ে থাকতে চাইছে না। পরের ম্যাচই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ম্যাচটা কতটা চ্যালেঞ্জিং, সেটা বিরাটও খুব ভাল করে জানেন। গতবার এই অস্ট্রেলিয়ার কাছেই সেমিফাইনালে হারতে হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনিদের। ইন্ডিয়া নিশ্চয়ই চাইবে সেই বদলা নিতে।
বিশ্বকাপের মাস কয়েক আগে এই অস্ট্রেলিয়া নিয়ে কাউকে তেমন আশাবাদী শোনাচ্ছিল না। কিন্তু ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর পর থেকেই সবকিছু হঠাৎই বদলে যায়। তারপর পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ। ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভ স্মিথ ফিরে আসায় টিম আরও শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে। পেস অ্যাটাকেও মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্স রয়েছে। ভারতীয় শিবিরও অজি-বধের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। শুরুতে স্টার্ক আর কামিন্সকে একটু দেখেশুনে খেলতে হবে। সেটা করতে পারলে আর চিন্তা নেই। শিখর রানের মধ্যে না থাকলেও ভারতীয় শিবিরের আশা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই রান ফিরবেন গব্বর।
The post প্রোটিয়া বধের পর রোহিত ম্যানিয়া লন্ডনে, অজি ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু ভারতের appeared first on Sangbad Pratidin.