shono
Advertisement

চাঁদেই যাননি আর্মস্ট্রংরা, পুরোটাই ভাঁওতা! আদৌ কি ধোপে টেকে এমন দাবি?

এক নয়, একাধিক কূটযুক্তি রয়েছে 'চাঁদে মানুষ যায়নি' তত্ত্বের সপক্ষে!
Posted: 08:34 PM Sep 02, 2023Updated: 08:34 PM Sep 02, 2023

বিশ্বদীপ দে: চন্দ্রযান ৩ এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে। রোভার প্রজ্ঞান ও ল্যান্ডার বিক্রমের দিকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে নজর রেখে চলেছেন সারা বিশ্বের মহাকাশপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে ফিরে আসছে ইতিহাসও। অবশ্যই ১৯৬৯ সালে নিল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) ও বাজ অলড্রিনের চাঁদের মাটিতে পা রাখার ইতিহাসই সবচেয়ে বেশি জায়গা করে নিচ্ছে আলোচনায়। আর অবধারিত ভাবেই উঠে আসছে চাঁদে মানুষ নামা নিয়ে সেই বহু আলোচিত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’। যে তত্ত্বকে মানলে ধরে নিতে হয়, আজ পর্যন্ত মানুষের পা পড়েনি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে (Moon)! কিন্তু সত্যিই কি তাই?

Advertisement

সারা পৃথিবীতেই বহু বিখ্যাত ও আলোচিত ঘটনা তথা ইতিহাসকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন কন্সপিরেসি থিয়োরির প্রবক্তারা। যার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলা তত্ত্ব হল চাঁদে নামা নিয়ে আমেরিকার ‘ডাহা মিথ্যা’র দাবি। তাঁদের বক্তব্য, এটা পুরোপুরি হলিউডের সিনেমার মতো ক্যামেরার কারসাজি বই কিচ্ছু নয়। পৃথিবীর মাটিকেই চাঁদ বলে দেখানো হয়েছে। দেখা যাক কী কী যুক্তি দেন তাঁরা-

[আরও পড়ুন: ‘১০০ নট আউট’, চাঁদে ১০০ মিটার পাড়ি প্রজ্ঞানের, ছবি প্রকাশ করে জানাল ISRO]

চাঁদে হাওয়া বাতাস নেই, তাহলে পতাকায় ঢেউ খেলছে কী করে?

চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকান পতাকার ছবি ঘাঁটলে সত্যি বিস্মিত হতে হয়। বাজ অলড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট করছেন মার্কিন পতাকাকে। এই ছবি অ্যাপলো ১১ মিশনের অন্যতম আইকনিক ছবি। সেই সময়ে ওই ছবিটিকে অনেকেই রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ) সঙ্গে স্পেস রেসে এগিয়ে যাওয়ার প্রচ্ছন্ন মার্কিন বার্তা বলেই ধরেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের প্রশ্ন এটাই, যেখানে হাওয়াবাতাসই নেই চাঁদে, সেখানে আমেরিকার পতাকায় হাওয়া খেলছে কী করে?

কেন আকাশে কোনও তারা দেখা যাচ্ছে না?

অ্যাপলো ১১ মিশনের যত ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তার কোনওটাতেই আকাশে তারা ঝলমল করতে দেখা যাচ্ছে না। চাঁদে যেহেতু কোনও আবহাওয়ামণ্ডল নেই, তাই আকাশে মেঘের দেখা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু তাই যদি হবে তাহলে অন্ধকার আকাশে কেন অদৃশ্য নক্ষত্রেরা?

[আরও পড়ুন: মহাকাশ বিজয়ের পথে আরও একধাপ, চাঁদের পর এবার সূর্যে পাড়ি দিল আদিত্য এল১]

চাঁদের মাটিতে যেভাবে ছায়া পড়তে দেখা যাচ্ছে সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে এটা ‘ফেক’

যেহেতু চাঁদে আলোর একমাত্র উৎস সূর্য, তাই তার মাটিতে পড়া ছায়ার প্রকৃতি একই রকম হওয়ার কথা। কিন্তু চন্দ্রাভিযানের ছবিগুলিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ভাবে ছায়া পড়েছে। যা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন আলোর উৎস একাধিক হয়। অর্থাৎ কোনও স্টুডিওয় শুটিং করলে যেমন একাধিক আলোর উৎসের কারণে ছায়ার বিভিন্নতা দেখা যায় এখানে সেটাই দৃশ্যমান। যা বুঝিয়ে দেয় চাঁদে আর্মস্ট্রংদের পা রাখার ব্যাপারটাই ‘ফেক’।

আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদে নামার ভিডিও করল কে?

চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং। সেই সময় বাজ অলড্রিন ছিলেন মডিউল ইগলের মধ্যেই। অভিযানের তৃতীয় নভশ্চর মাইকেল কলিন্স ছিলেন কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ার ভিতরে। তাহলে আর্মস্ট্রং ইগলের দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন চাঁদের মাটিতে সেই দৃশ্য শুট করল কে? চাঁদের মাটিতে নিশ্চয়ই আগে থেকে ক্যামেরাম্যান পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি।

এই ধরনের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আরও রয়েছে। তবে এই চারটি বোধহয় সবচেয়ে আলোচিত। কিন্তু সত্যিই কি এসব দাবির কোনও সারবত্তা রয়েছে? চাঁদে মানুষের পা রাখা কেবল আমেরিকানদের সাফল্য নয়। একে দেখা হয় গোটা মানবজাতির সাফল্যের এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে। মনে পড়ে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবির সেই বিখ্যাত ইন্টারভিউয়ের দৃশ্য? যেখানে সিদ্ধার্থকে বোর্ডের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন করতে থাকেন, চাঁদের মাটিতে পা রাখাই কি সেই দশকের শ্রেষ্ঠ ঘটনা নয়? সিদ্ধার্থ অবশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। যাই হোক, সেই ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীতেও সর্বত্র আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছিল আর্মস্ট্রংদের নিয়ে। সেই ঘটনার অভিঘাত আজও রয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটাই মহাকাশে মানুষের শ্রেষ্ঠ সাফল্য বলেই ধরা হয়। আদপে তা ‘ফেক’?

শুনতে যতই মুখরোচক মনে হোক, এই ধরনের তত্ত্ব নেহাতই আজগুবি। এর কোনও মজবুত ভিত্তি নেই। কীরকম? একে একে বলা যাক। প্রথমেই আসা যাক, পতাকা প্রসঙ্গে। ভাল করে দেখলেই বোঝা যাবে ওই পতাকায় উল্লম্ব ও অনুভূমিক দুই অবস্থানে দু’টি দণ্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। কেননা, চাঁদে যেহেতু বাতাস নেই, তাই পতাকা পুঁতলেও তা একেবারেই দণ্ডের গায়ে গায়ে ঝুলে থাকবে। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই ওইভাবে পতাকাটি তৈরি করা হয়েছিল। আর সেই কারণেই দেখে মনে হয় যেন পতাকাটা হাওয়া দুলছে।

আবার, আকাশ তারাবিহীন থাকার কারণ হল, চাঁদে যখন নেমেছিলেন আর্মস্ট্রংরা, তখন সেখানে ছিল দিন। আর নভশ্চরদের পোশাকও সাদা ঝলমলে। তাই যত ছবি তোলা হয়েছিল, তাতে সূর্যের আলোর ঔজ্জ্বল্যের ধাক্কায় আকাশ তারাবিহীন দেখাচ্ছিল। মনে রাখতে হবে, সেই ১৯৬৯ সালে ক্যামেরার গুণগত মানও কিন্তু আজকের মতো এত আধুনিক হয়নি।
এদিকে চাঁদের মাটিতে ছায়ার কথা বলতে বসলে মাথায় রাখতে হবে, প্রকৃতপক্ষে চাঁদের মাটিতে সূর্যই একমাত্র আলোর উৎস নয়। সেখানকার এবড়ো খেবড়ো মাটিও উৎসের কাজ করে। তারা এত বেশি আলো প্রতিফলন করে, যার ফলে ছায়াগুলি ওইভাবে ছড়িয়ে পড়ে।পাশাপাশি আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের মাটিতে নেমে আসার ভিডিও নিয়েও স্পষ্ট উত্তর রয়েছে।

ইগলের গায়ে বসিয়ে রাখা ক্যামেরাই ওই ভিডিও তুলেছিল। এছাড়াও যে দু-একটা খটকার সৃষ্টি হয়, সেই সবেরই কিন্তু পালটা ব্যাখ্যা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’ আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু এমন দাবি করেনি। বরং বারবার তারা আর্মস্ট্রংদের গড়া ইতিহাসকে স্বীকৃতিই দিয়েছে। কাজেই, সব দিক বিচার করলে পরিষ্কার হয়ে যায় এই সব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনও ভিত্তি নেই। তা বড়জোর চায়ের টেবিলে ঝড় তুলতে পারে মাত্র। এর বেশি কিছু নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement