সুলয়া সিংহ: পারিপার্শ্বিক বেশ কিছু বিষয় অনেক সময়ই আমাদের কাছে গুরুত্বহীন বলে মনে হয়। কিন্তু তা যে একজনের জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, কতটা বদলে যেতে পারে একটা জীবন, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মাথা থেকে তা বেরিয়ে যায়। সমাজের সেই বিষয়গুলিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন তাপসী পান্নু। কখনও ‘পিংক’ তো কখনও ‘থাপ্পড়’ মেরে বুঝিয়ে দেন, মহিলাদের নিয়ে আরও একটু ভাবা প্রয়োজন। সেই ধারাই বজায় রইল ‘রশমি রকেট’ (Rashmi Rocket) ছবিতে। প্রাণ খুলে আকাশে উড়তে চাওয়া পাখির ডানা কেটে দিলেও তার লড়াই থামে না। থামা উচিতও নয়। পরিচালক আকর্ষ খুরানার এহেন বার্তা নিঃসন্দেহে অ্যাথলিটদের আত্মবিশ্বাসে অক্সিজেন দেবে।
বলিউডে খেলা কিংবা খেলোয়াড়দের জীবন সংগ্রাম নিয়ে আখছাড় সিনেমা হচ্ছে। বিষয়টা দর্শকরা ভাল ‘খায়’। রশমি রকেট অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও অ্যাথলিটের জীবনকাহিনি নয়। বরং এ ছবি তাদের কথা বলে যারা দুর্দান্ত পারফর্ম করেও নোংরা রাজনীতির শিকার। যাদের ঐশ্বরিক প্রতিভাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র আখ্যা দেওয়া হয়। যারা সমাজের বদনাম থেকে মুখ লুকোতে আত্মহননের রাস্তা বেছে নেয়। ছবিটি তাই নিজগুণেই সমাজের মূল্যবান আয়না হয়ে উঠেছে।
[আরও পড়ুন: প্রথম সপ্তাহেই ২ কোটি টাকার বেশি আয়! বক্স অফিসে ‘গোলন্দাজ’ দেবের বাজিমাত]
ছোট থেকে রকেট গতিতে দৌড়ানোর জন্য রশমিকে ‘রকেট’ বলেই ডাকত সকলে। ছেলেদের তো বটেই, রেসিং ট্র্যাকে সেনা জওয়ানদেরও পিছনে ফেলে সে। পেশাদার অ্যাথলিট হিসেবে এই রশমিই আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে সোনা জেতায়। কিন্তু তার সাফল্য অনেক অ্যাথলিটের কাছেই তো পথের কাঁটা! তাই রশমিকে বদনাম করতে লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়। তাকে ছেলে প্রমাণ করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থা। আর সেখান থেকেই শুরু হয় রশমির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। তবে এ লড়াই একা রশমির নয়। বাস্তবেও একই অভিযোগে একাধিক অ্যাথলিটকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে মাঠের বাইরে। কেউ কেরিয়ারে ইতি টেনেছেন তো কেউ জীবন থেকেই…। সেই সব মহিলাদেরই প্রতিনিধি রশমি। আর এখানেই রিলের সঙ্গে রিয়েল লাইফকে সুন্দরভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।
তাপসী পান্নুর (Taapsee Pannu) অভিনয় নিয়ে বলতে গেলে শুধু বলতে হয় আর একটু প্রাণ খুলে হাসতে পারতেন তিনি। রশমি অর্থাৎ তাপসীর স্বামী তথা মেজরের ভূমিকায় প্রিয়াংশু পাইনিওলি মন্দ নন। তবে ছবির দ্বিতীয় ভাগে এন্ট্রি নিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ‘আইনজীবী’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ভার্সেটাইলিটি প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। তাঁর উপস্থিতিতে কোর্টরুমের দৃশ্যগুলো বেশ টানটান হয়ে উঠেছে।
খেলার মাঠের গতে বাধা প্রেক্ষাপট হলেও এ ছবি প্রশাসনিক নিয়ম-কানুন, অ্যাসোসিয়েশনের নোংরা রাজনীতির দিকটা তুলে ধরেছে। যদিও সাফল্য যে দীর্ঘদিনের সাধনার ফল, সে বিষয়টা আরও খানিকটা বর্ণনা করাই যেত। তবে উৎসবের মরশুমে Zee5 ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া এ ছবি দেখতেই পারেন।