সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুজোয় 'বসতে লক্ষ্ণী'। নমো নমো করে দুর্গাপুজোয় আখেরে রাজ্যের অর্থনীতিরই ক্ষতি। সেকথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন উৎসবে ফেরার জন্য। তবে আর জি কর কাণ্ডের পর থেকে মনখারাপের কালো মেঘ ঘনিয়েছে শহরজুড়ে। এমন আবহে চলতি বছর দুর্গোৎসব কেমন হবে? সেই নিয়ে দ্বিমত আমজনতার মধ্যে। প্রতিবাদের প্রথম সারিতে থেকে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও প্রথমে বলেছিলেন, "পুজোতে আছি, উৎসবে নেই।" সেই প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার 'কফি উইথ কুণাল'-এ দেবকে(Dev) 'উৎসবে ফেরা' প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষের সোজাসাপটা প্রশ্ন, "তোমার টিমেই তো দুটো ভাগ। একদল বলছে, উৎসবে ফিরুন, আরেকদল বলছে, উৎসবে ফিরবেন না। এপ্রসঙ্গে কী মত?" সেখানেই প্রযোজক হিসেবে সাফ বার্তা দিলেন দেবও।
অভিনেতা-প্রযোজকের মন্তব্য, "আমি স্বাধীনচেতা চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী। সকলের ব্যক্তিগত মতাদর্শ হয়। এবং সেটাকে আমি সম্মান করি। কে, কী ভাবছেন, তার উপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রযোজক হিসেবে, আমি যাকে যে ভূমিকার জন্য নিয়োগ করেছি, সেটাই শুধু সেটে আমার দেখার দায়িত্ব। নাম করেই বলছি, স্বস্তিকা বা সৃজিত 'টেক্কা'র শুটিংয়ে যার যে দায়িত্বটা পালন করার ছিল, সেটা স্ব-স্বক্ষেত্রে অসম্ভব ভালো করেছেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় দারুণ পরিচালক। আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও দুরন্ত অভিনেত্রী। এবার আসি উৎসবে ফিরছি কি ফিরছি না... সেই প্রসঙ্গে। এই বিষয়ে আমার কাউকে কিছু বলা উচিত নয়। তবে হ্যাঁ, প্রযোজক হিসেবে বলব, সিনেমাটা বানাতে আমারও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছে। আমার বাবা এত টাকা রেখে যাননি যে, ছবি না চললে আমার সংসারে প্রভাব পড়বে না। আসলে খুব কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। আজ অবধি কাউকে অসম্মান করিনি। এমনকী রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরও মঞ্চ থেকে কাউকে কোনওরকম অসম্মান করিনি।"
এরপরই টলিউডের সুপারস্টারের সংযোজন, "আমিও চাই একজন প্রযোজক হিসেবে যে, আমার সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কে, কী করছেন? সেটা আমার দেখার কথা নয়। তবে হ্যাঁ, তুমি যখন আমার সিনেমার প্রোমোশন করছ বা 'টেক্কা'র প্রচারে যাচ্ছে, আশা করব এমন কোনও মন্তব্য কোরো না, যাতে আমার সিনেমার ক্ষতি হয়। কিংবা সিনেমাটাকে দিনের শেষ ভুগতে হয়! কারণ প্রতিদিন হিন্দি সিনেমার দর্শকদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রযোজক হিসেবে আমিও খুব কষ্টের দিন দেখেছি। বাংলা সিনেমা বানাতে হলে 'ধক' লাগে। প্রতিটা প্রযোজককে প্রতিদিন পরিশ্রম করতে হয় প্রতিদিন হলে টেনে আনতে দর্শকদের। কারও একটা মন্তব্যের জন্য যেন 'টেক্কা'কে ভুগতে না হয়। কে কার সোশাল মিডিয়ায় কী বলছেন? সেটা আমার বক্তব্য নয়। তবে আমার ছবিকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করলে আমার খারাপ লাগবে। আসল কথা, সিনেমাটা চললে সকলের ভালো হবে। উৎসব শুধু আমার বা তোমার না, উৎসব একটা অধিকার। যে-যাঁরা নিজের মতো করে প্রতিবাদ করছি। মানুষ ভালো থাকুক এটাই চাই।"
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই প্রযোজক তথা অভিনেতা দেবের 'টেক্কা'র পোস্টার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কুণাল ঘোষ। দাবি করেন, আর জি কর আবেগকে কাজে লাগিয়ে 'টেক্কা'র প্রোমোশন ব্যানারের ক্যাপশন লেখা। বিতর্কের জেরে সেই পোস্টার বদলে দেন নির্মাতারা। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দুই তৃণমূল নেতার বাদানুবাদ দেখে ঠাট্টা করেছিল বিরোধী শিবিরও! তবে 'টেক্কা'র ট্রেলার দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন কুণাল ঘোষ। দেব নিজে যে ছবিতে প্রযোজক তথা মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন। এবার 'কফি উইথ কুণাল' থেকে প্রযোজক হিসেবে বড় বার্তা দিলেন দেব। সাফ বললেন, তাঁর সিনেমাকে প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করলে আখেড়ে ছবিটা ভুগবে। যা আখেড়ে সিনে ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এই বার্তা কি ঘুরিয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কেই দিতে চাইলেন তিনি? তবে উল্লেখ্য, অভিনেত্রী টেক্কা রিলিজের কথা জানিয়ে সাফ একথাও বলেছিলেন, "খালি পেটে বিপ্লব হয় না।"
প্রসঙ্গত, এর আগেও 'টেক্কা'র প্রচারে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর মুখোমুখি হয়ে অভিনেতা প্রযোজক জানিয়েছিলেন, "সিনেমা সবসময়ে মানুষের মন ভালো রাখার কারণ ছিল। সেই জায়গা থেকে সিনেমা প্রতিবাদের ভাষা থেকে আলাদা নয়। সিনেমা রিলিজ করছে মানেই আমরা বলছি না প্রতিবাদ করবেন না। অনেক মানুষের কাছে পুজোর মরশুম রোজগারের অন্য একটা বড় উপায়। অনেক হকার, ঢাকিরা গ্রাম ছেড়ে এইসময়ে শহরে আসেন পরিবার নিয়ে। কোথায় থাকবেন, কোন ক্লাব বায়না দেবে কেউ জানে না ওঁরা। ওঁদের পুজো শুরুই হয় দশমীর পর যখন নতুন জামাকাপড় কিনে বাড়ি ফেরেন। পুজো এবং উৎসবের অনেকগুলো ভাষা রয়েছে। সিনেমা তার মধ্যে অন্যতম। সেরকমই সিনেমা হলে সিনেমা চললে সিনেশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দুটো টাকা রোজগার হয়। সেই টাকা থেকে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিসিটিভি লাগানো হবে প্রেক্ষাগৃহে নারী নিরাপত্তার জন্য। পুরোটাই তো একটা সিস্টেম। আমি বলব, উৎসবে ফিরুন এবং প্রতিবাদও রাখুন।"