সুকুমার সরকার, ঢাকা: আগামী ৮ জুলাই চিন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিন আগেই তিনি ফিরেছেন ভারত থেকে। বেজিং যাওয়ার আগে তাঁর দিল্লিতে যাওয়া নিয়ে নানা চর্চা শুরু হয় আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ ভারত-চিন সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছে তা অজানা নয় ঢাকার কাছে। এই প্রেক্ষিতে, আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলাদেশের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত রাজনৈতিক বন্ধু হলেও চিন উন্নয়নের বন্ধু। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প নিয়ে ভারত-চিন দুদেশই আগ্রহী। তাই কাউকেই চটাতে চায় না বাংলাদেশ।
শনিবার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রকের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী পাহাড়ি ফলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে বক্তব্য রাখার সময়ই উঠে আসে ভারত-চিন প্রসঙ্গ। তখনই বাংলাদেশের সঙ্গে দুদেশের সম্পর্ক স্পষ্ট করে দেন তিনি। এদিকে, দিন দুয়েক আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে রাজি বেজিং।
[আরও পড়ুন: মায়ানমারে এখনও নেভেনি সংঘর্ষের আগুন, ফের বাংলাদেশে আশ্রয় সেনা-সহ ৩২ রোহিঙ্গার]
বলে রাখা ভালো, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ঢাকায় আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। ফলে বন্ধুদেশের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করছে ‘ড্রাগন’ সেদিকেই তীক্ষ্ণ নজর রাখছে দিল্লি। এই আবহে হাসিনার চিন সফর নিয়ে বেশ চর্চা চলছে। জানা গিয়েছে, চারদিন বেজিংয়ে থাকবেন হাসিনা। বৈঠক করবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি সহযোগিতা, ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, ডিজিটাল ইকোনোমি, শিক্ষা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে দুদেশের মধ্যে। এছাড়াও দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠক হবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, হাসিনার সফরে ভারতের নজর থাকবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের ওপরেও। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বার্তা দিয়েছিলেন ঢাকার সঙ্গে একযোগে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে কাজ করার। তার পর থেকেই বাংলাদেশকে কাছে টানতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে বেজিং। চিন যাই বলুক না কেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প আসলে ফাঁদ বলেই মনে করেন অধিকাংশ বিশ্লেষক। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে ঋণের ফাঁদ পেতেছে কমিউনিস্ট দেশটি। ভারত বরাবর এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে। কারণ, চিনা প্রকল্পের একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। ফলে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশে বিতর্কিত এই প্রকল্পের জাল বিস্তার করতে পারে চিন। ফলে ভারতের বন্ধুত্ব বজায় রেখে কোন অবস্থান নেয় ঢাকা সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।