নতুন শত্রু মাঙ্কিপক্স (Monkeypox)। এদেশেও যে কোনও সময়ে ঢুকে যেতে পারে। কতটা চিন্তার, বললেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। শুনলেন সোমা মজুমদার।
এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! এখনও সম্পূর্ণভাবে কোভিড (COVID-19) থেকেই মুক্তি মেলেনি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মাঙ্কিপক্সের দাপট। বসন্ত পরিবারের এই রোগটি প্রাথমিকভাবে আফ্রিকায় সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ইংল্যান্ড, স্পেন ও পর্তুগালের পর জার্মানি, বেলজিয়াম, ইটালি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, আমেরিয়া, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়াতে মাঙ্কিপক্স থাবা বসিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১২টি দেশের মোট ৯২ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২৮ জনকে সন্দেহভাজন হিসাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
আশ্চর্যজনকভাবে কোনও রোগীরই সাম্প্রতিককালে আফ্রিকায় যাওয়ার ইতিহাস নেই। তাই ভারত যে একেবারে বিপদমুক্ত, এমনটা বলাও মুশকিল। আসলে প্রথম দিকে করোনাও (Coronavirus) ভারত থেকে দূরে রয়েছে বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু গত দু’বছর একাধিকবার একটানা দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থেকেও এখনো ভারত পুরোপুরি মারণ ভাইরাস মুক্ত হয়েনি। এবার মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রেও এই রকম পুনরাবৃত্তি না হওয়ার জন্য প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
মাঙ্কিপক্সের ইতিহাস
মাঙ্কিপক্স এক বিশেষ ধরনের বিরল বসন্ত রোগ। তবে সামান্য কিছু উপসর্গের মিল ছাড়া স্মলপক্সের সঙ্গে এটির কোনও সম্পর্ক নেই। ১৯৫৮ সালে প্রথমবার বানরের শরীরে এই ভাইরাসটি পাওয়া যায় বলেই অসুখটির নাম মাঙ্কিপক্স দেওয়া হয়েছিল। তবে, মানুষের মধ্যে প্রথমবার এই রোগের সংক্রমণ দেখা যায় ১৯৭০ সালে। প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে কঙ্গোতে স্মল পক্স নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। এর ঠিক দু’বছর পরে ডেমোক্র্যাটিভ রিপাবলিকান কঙ্গোতে নয় বছরের একটি কিশোরের শরীরেই প্রথম ভাইরাসটি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। প্রধানত আফ্রিকাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাওয়ায় জিনগতভাবে সেন্ট্রাল আফ্রিকান ক্লেভ এবং কঙ্গো এই দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে কঙ্গো স্ট্রেনটি অনেক বেশি গুরুতর এবং এতে মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি।
কীভাবে সংক্রমণ
প্রধানত কাঠবিড়ালী, ইঁদুর, ছুঁচো-সহ তীক্ষ্ণ দাঁতের পশুর থেকেই মানুষের শরীরে বেশি ছড়ায় মাঙ্কিপক্স। এইসব পশুর কামড়, আঁচড় এমনকী, ঘনিষ্ঠভাবে সংস্পর্শে এলেও মানুষের শরীরে মাঙ্কিপক্স প্রবেশ করতে পারে। এরপর সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট দিয়ে এবং ত্বকের মধ্যে দিয়েই অন্যান্য মানুষের মধ্যে এবং মায়ের থেকে সন্তানের সংক্রমণ হতে পারে।
[আরও পড়ুন: ঘনঘন ভুলে যাচ্ছেন? প্রিডিমেনশিয়া নয়তো? জেনে নিন বিশেষজ্ঞর মতামত]
সমকামীরা সাবধান
সারা বিশ্বে মোট আক্রান্ত একশো ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে অনেকে সমকামী বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে WHO। তাই মনে করা হচ্ছে যৌন সংসর্গ থেকেও এই ভাইরাস ছড়ায়।
কীভাবে বুঝবেন
জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথা হয় ও লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে।
স্মল পক্সের মতো মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রেও ফোসকা হতে দেখা যায়। ফ্লুইড যুক্ত এই ফুসকুড়িগুলি থেকে ত্বকের দাগ হতে পারে। সাধারণত ভাইরাসটি প্রবেশের পরে রোগীর শরীরে উপসর্গ থাকতে পারে ৫-২১ দিন। সেক্ষেত্রে প্রথম দিকে জ্বর গা-হাত-পা ব্যথা এবং পরবর্তীকালে মুখ ও হাত পায়ের ত্বকের সমস্যা শুরু হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এনকেফেলাইটিস, ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া, সেপসিস এবং চোখের উপর প্রভাব পড়তে পারে। প্রথমত, লক্ষণ দেখা যাওয়ার আগে কয়েকদিনের মধ্যে রোগী প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছেন কিনা দেখতে হবে। তাছাড়া ত্বকের মধ্যে হওয়া ফোসকার তরল নিয়ে পিসিআরের মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত যায়।
এদেশে আসতেই পারে
এদেশে যে কোনও রোগ যে কোনও সময়ে আসতে পারে। বর্তমানে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর হার ৩-৬ শতাংশ থাকলেও আগামীদিনে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তাই বেশি সংক্রামিত জায়গায় কিছুদিন অন্তত যাওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের সজাগ হতে হবে। সংক্রামিত রোগীর নমুনা সংগ্রহও খুব সাবধানে করতে হবে। কোনও লক্ষণ খেয়াল করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মাস্কেই আটকাবে
বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক পরুন, ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, লক্ষণ দেখলে নিজেকে আলাদা করে নিন, উপসর্গ থাকলে প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।