‘ডিবেঞ্চার’ শব্দটি শুনেছেন আগেও, কারণ এটি বাজারের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা কোনওভাবেই নতুন নয়। বরং ডিবেঞ্চার হল ঋণপত্রের জগতের একটি স্থায়ী অংশ। বস্তুত কর্পোরেট সেক্টর এই বিশেষ ডেট ইনস্ট্রুমেন্টটি ছাড়া চলতেই পারে না। ডিবেঞ্চারে লগ্নি করা খুব একটা শক্ত নয়, বিনিয়োগকারীকে যদিও সাবধানে বেছে নিতে হবে। লিখছেন নীলাঞ্জন দে
সঞ্চয় এর পাঠকদের জন্য ডেট মার্কেট কোনও নতুন বিষয় নয়, এ নিয়ে আগেও আমরা আলোচনা করেছি। তবে সেই সব লেখায় ঋণপত্রের বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে, কোনও বিশেষ অংশ নিয়ে কিছু জানাইনি। আজ ডিবেঞ্চার নিয়ে কথা বলব- বলাই বাহুল্য এটি বাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আধুনিক যুগের কর্পোরেট সেক্টর টাকা তোলে বন্ড বা ওই জাতীয় ঋণপত্র ছেড়ে-এ কথা তো সকলেরই জানা। ডিবেঞ্চার এক্ষেত্রে তেমন অচেনা কিছু নয়, বরং লগ্নিকারীরা বহুদিন যাবৎই এই সমস্ত ইন্সট্রুমেন্টগুলিতে ‘অ্যালোকেশন’ তথা বরাদ্দ করে আসছেন। নিজের রিস্ক প্রোফাইল বুঝে, ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যাপারে জেনে নিয়ে এবং অবশ্যই ডিবেঞ্চারটির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হয়ে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
[আরও পড়ুন: জীবনযাত্রায় রাশ না টেনেই ব্যয় কমান, রইল দারুণ কিছু টিপস]
মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে : টার্ম (মেয়াদ), কুপন (ইন্টারেস্ট রেট বা সুদের হার), ইল্ড (সুদ এবং ইল্ডের পার্থক্য বুঝে নিন), ক্রেডিট রেটিং এবং রিপেমেন্ট নিয়ে শর্তাবলী। এগুলির সঙ্গে পরিচিত না হয়েই বিনিয়োগ করলে পরে অনুশোচনা করতে হবে।
ডিবেঞ্চার দু’ভাবে ভাগ করতে পারেন। কনভার্টিবল এবং নন-কনভার্টিবল। প্রথমটির ক্ষেত্রে ঋণপত্রটি পরে স্টক বা ইকুইটিতে বদলে ফেলা যায় এবং দ্বিতীয়টিতে যায় না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য NCD (non convertible debenture)। বিশেষত যেগুলি স্টক এক্সচেঞ্চে লিস্টেড (এবং ট্রেডেড) হতে পারে। তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ–
-ম্যাচুরিটির তারিখ নির্দিষ্টভাবে বলা থাকে।
-ট্যাক্স বেনিফিট নেই তবে সুদ মোট ইনকামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।
-ভাল ‘পোস্ট-ট্যাক্স রিটার্ন’ (অর্থাৎ আয়কর দেওয়ার পর) হলে লগ্নিকারীর সুবিধা হয়।
-ক্রেডিট রেটিং দেখে কেনা উচিত।
-রিস্ক অবশ্যই আছে তবে ভাল কোম্পানির ডিফল্ট করার সম্ভাবনা কম থাকে।
-ট্রেডিং হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বেচে দিতে পারবেন। কিন্তু ম্যাচুরিটির আগে বেরিয়ে এলে (বিশেষ কারণ ছাড়া) লোকসানও হতে পারে।
-Secured NCD হলে ভাল, কারণ কোম্পানি নিজের অ্যাসেট দিয়ে সুরক্ষা দেয়। যদি Unsecured NCD হয়, তাহলে ঝুঁকি সত্যিই বেশি, কাজেই ডিফল্ট হলে বিনিয়োগকারী বেশ বিপদে পড়তে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে সুদের হার সাধারণত বেশি থাকে।
আজকাল ডিবেঞ্চারে লগ্নি করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে, নিজের জন্য অ্যালোকেট করা খুবই সোজা, তাই সে সব নিয়ে আর কিছু বলছি না। সাধারণত সেকেন্ডারি মার্কেটেও (অর্থাৎ লিস্টিং হওয়ার পর) কেনাবেচা করা যায়, তবে লিকুইডিটির অভাব না থাকলেই ভাল।
যাঁরা নামী কোম্পানির ডিবেঞ্চারে নিজের উদ্বৃত্ত অর্থের অংশ রাখতে চান, তাঁরা নিশ্চয় সুরক্ষার কথা ভাববেন। ডিফল্ট আগে প্রচুর বার হয়েছে, এবং সাম্প্রতিক অতীতে IL&FS জাতীয় কিছু নামকরা কোম্পানির ক্ষেত্রেও তা দেখেছি। অপরদিকে ছোট বা সাধারণ কোম্পানির ঠিকঠাক টাকা ফেরত দিতে অসুবিধা হয়নি, এও অনেকবার দেখেছি। সবমিলিয়ে কিছু তথ্য মাথায় রেখে লগ্নি করলে লক্ষ্মীলাভ নিশ্চিত।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)