সুকুমার সরকা, ঢাকা: গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ ছিল বিএনপির। দমন পীড়নের মাধ্যমে ভোট করাচ্ছে সরকার, এই দাবি তুলে আমেরিকা-সহ পশ্চিমের নানা দেশের কাছে নালিশ জানিয়েছিল খালেদা জিয়ার দল। যা নিয়ে আমেরিকার চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল ঢাকাকে। গণতন্ত্র রক্ষা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের করানো নিয়ে ক্রমাগত তোপ দেগেছিল ওয়াশিংটন। বিশেষ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নির্বাচনের দিন ও তার পরেও পিটার হাসের কোনও পাত্তা ছিল না। ভারতের চাপেই কি 'গা ঢাকা' দিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত?
আমেরিকা ও বাংলাদেশ। এই দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের মজবুত সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। দিল্লির অঙ্গুলীহেননেই ভোট করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযোগও ছিল বিএনপির। কিন্তু নির্বাচনের আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে ভারত জানায়, তারা কোনও দেশের অভ্যান্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। তাহলে কি 'বন্ধু' দেশে হস্তক্ষেপ নিয়ে আমেরিকাকে কোনও বার্তা দিয়েছিল দিল্লি? সম্প্রতি এমনই প্রশ্ন শোনা যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর গলায়।
[আরও পড়ুন: হাসিনাকে সরাতে ব্যর্থ, বিএনপির নেতার ‘কূটনৈতিক’ নৈশভোজে পশ্চিমি ‘দূতে’রা]
নয়াদিল্লিতে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ ভারত মোটেই পছন্দ করেনি। বাইডেন প্রশাসনের কাছে দিল্লি এটা স্পষ্ট করে দেওয়ার পরেই পিটার হাসকে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল। তিনি বলেন, "আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ভারতের পক্ষ থেকে তখন এই কড়া বার্তাটা আমেরিকাকে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পিটার হাসকে নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে দেখা গিয়েছিল। অথচ ৭ জানুয়ারি বা তার পরেও তাঁকে আর দেখাই যায়নি। কোথায় যে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন সেটা তিনিই জানেন! ভারতের বার্তার পরই এটা হয়েছিল।"
এই বিষয়টি নিয়েই এক সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন বিদেশদপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে প্রশ্ন করা হয়। যা শোনার পর হেসে উড়িয়ে দিয়ে তিনি সাফ বলেন, "না। এই তথ্য সঠিক নয়। আমি নয়াদিল্লিতে সব বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের দিকে নজর রাখিনা।" কেন নজর রাখছেন না জানতে চাইলে মিলার বলেন, "আমার নজর দেওয়ার জন্য আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই ভালো মনে করি আমি।" বলে রাখা ভালো, গত মাস দুয়েকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। একযোগে কাজ করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যা নিয়ে চাপে পড়েছে বিএনপি।