সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। ন’ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হল পুরীর জগন্নাথদেবকে (Jagannath)। অভুক্ত থাকতে হল বলরাম-সুভদ্রাকেও। শুক্রবারের এই ঘটনার খবর প্রচার হতেই দেশজুড়ে শোরগোল পড়েছে।
নিষিদ্ধ সেবায়েতের জোর করে মন্দিরে প্রবেশ করা নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ডের জেরেই সমস্ত আচার স্থগিত থাকল আটশো বছরের পুরনো এই মন্দিরের। ভোগ নিবেদন করা হল না বিগ্রহের সামনে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রাতরাশ নিবেদন করা হয় জগন্নাথ, বলরাম এবং দেবী সুভদ্রাকে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অভুক্তই রয়ে গেলেন তাঁরা।
দেবব্রত মহাপাত্র নামে এক সেবায়েত জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে ভিন জাতির মহিলাকে বিবাহ করার জন্য পুষ্পলকা সেবায়েতকে (সিংহরি) নিষিদ্ধ করেছিল মন্দির কমিটি। কোনও রকম পুজোর রীতি পালন তো দূর অস্ত, পুরীর মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রেও তাঁর উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু, শুক্রবার সকালে মঙ্গলারতির সময়ে জোর করে তিনি মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
পুষ্পলকাকে মন্দিরে প্রবেশ দ্বারে রুখে দেন বাকি সেবায়েতরা। আর তাতেই গোল বাধে।
শুক্রবার মঙ্গল আরতির পর এদিন জগন্নাথধামে মহাস্নান রীতি পালনের কথা ছিল। এই রীতি অনুযায়ী ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং দেবী সুভদ্রার মূর্তিকে স্নান করানো হয়। নতুন পোশাক পরানো হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার আগে সেই কাজই করতেন সিংহরি সেবায়েত। এদিন তিনি জোর করে গর্ভগৃহে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন এই মহাস্নান রীতিতে অংশ নেওয়ার জন্যই। কিন্তু, গেটেই তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় ওই সেবায়েতের।
[আরও পড়ুন: রিয়াল মাদ্রিদের ‘ফুটবল বাণিজ্য’ দেখে অভিভূত মমতা, বাংলায় কাজে লাগানোর ভাবনা ]
ঘটনাস্থলে হট্টগোলের খবর পেয়ে পৌঁছে যান ‘শ্রীজগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের’ আধিকারিকরা। মন্দিরের সেবায়েতদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁরা। সমস্যা মিটতে মিটতে দুপুর গড়িয়ে যায়। বেলা ২টো ২০ মিনিট নাগাদ মন্দিরের গর্ভগৃহ পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। এরপর বিগ্রহের সামনে প্রাতরাশের নিবেদন করা হয় বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ।
পূজার্চনার কাজ দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অভুক্ত থাকেন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। যদিও, এই নয় ঘণ্টা মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশে কোনও বাধা পড়েনি।
পরে, ‘শ্রীজগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ রঞ্জন দাস বলেন, “যাঁরা মন্দিরের পূজার্চনার কাজ বন্ধ রেখেছিলেন, যাঁদের জন্য ভগবানেরা অভুক্ত থাকলেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।” এদিকে, যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড সেই পুষ্পলকা সেবায়েত (সিংহরি) বলেন, “আমি নির্দোষ। ২০২২ সালেও আমি মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করেছিলাম। জগন্নাথধামে নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করেছিলাম আমি।”
প্রসঙ্গত, জগন্নাথের ভোগে মূলত দুই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ভাত, ডাল, তরকারি, খিচুড়ি জাতীয় রান্না করা খাবার থাকে। আর থাকে খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোট ৬ বার ভোগ দেওয়া হয়। সব রান্নাই তৈরি হয় মন্দিরের নিজস্ব রন্ধনশালায়। সাধারণ দিনে সকাল ৭টা থেকে আটটার মধ্যে জগন্নাথদেবকে প্রথম ভোগ দেওয়া হয়। এই ভোগকে বলা হয় ‘গোপালবল্লভা ভোগ’। এরপর জগন্নাথদেবের ভোগ হয় সকাল ১০টায়। যাকে বলা হয় ‘সকালা ধূপা’। এই সময়ের ভোগকে রাজভোগ অথবা কথাভোগও বলা হয়। সকালের এই ভোগে থাকে ২০ রকমের পদ।