যাঁরা চিনির বদলে সুগার ফ্রি খান, তাঁরাও কিন্তু নিরাপদ নন। কেন জানেন? ক্ষতির কথা শোনাচ্ছেন যাদবপুরের ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত বিশ্বাস। শুনলেন সোমা মজুমদার
এখন অনেকেই ফিট থাকতে ডায়েট থেকে চিনি দূরে রাখেন। মিষ্টির বিকল্প হিসাবে ‘সুগার ফ্রি’-র (Sugar Free) উপর অগাধ ভরসা রাখেন। বিশেষত যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি তাঁদের এই কৃত্রিম সুগার অতি পছন্দের জিনিস। এইসব কৃত্রিম মিষ্টি খেয়ে কি আদৌ কোনও লাভ হয়? নাকি স্বাস্থ্যের আরও বড় বিপদ ডেকে আনছেন!
ক্ষতিকরও হতে পারে
সাধারণ চিনির থেকে কৃত্রিম চিনিতে অনেকগুণ বেশি মিষ্টি অ্যাসপার্টেম থাকে। যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার, ডায়েট পানীয়, জাঙ্ক ফুডে এই অ্যাসপার্টেম উপস্থিত। নিয়মিত অ্যাসপার্টেম খেলে তা থেকে মাথা যন্ত্রণা, অস্থিরতা, হৃদযন্ত্রের ধড়ফড়ানি, ওজন বৃদ্ধি, হতাশা, স্নায়ু ও ব্রেনের সমস্যা হতে পারে। শুধু অ্যাসপার্টেমই নয় কৃত্রিম চিনিতে থাকে স্যাকারিনও। যা গর্ভবতী মহিলাদের একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কৃত্রিম চিনির এই উপাদানটি ইনসুলিন নিঃসরণ ঘটায় এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খিদে পাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কৃত্রিম চিনিতে থাকা সুক্রালোস থেকে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। আবার সাধারণত অ্যালকোহল, লজেন্সে যে ধরনের সুগার থাকে তা হল এভান ১০ গ্রুপের মিষ্টি। তাই গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ডায়াবেটিস না থাকলেও নিয়মিত সুগার ফ্রি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওজনও বাড়ে।
[আরও পড়ুন: সাবধান! ডায়াবেটিসের বিপদ আসন্ন, সুগার টেস্ট নিয়ে বিপজ্জনক তথ্য সাম্প্রতিক গবেষণায় ]
বুঝে ব্যবহার
কৃত্রিম চিনি কি উপাদান দিয়ে তৈরি তা না জেনে খাওয়া উচিত নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে স্বাভাবিক চিনি কম খাওয়া কিংবা স্বাদের সঙ্গে আপস করে একেবারে না খাওয়াই ভাল। আর যদি কেউ সুগার ফ্রি একান্তই খেতে চান তাহলে সেই নির্দিষ্ট কৃত্রিম চিনি থেকে শরীরে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কি না তা যাচাই করেই খাওয়া উচিত। অল্প পরিমাণ চিনি খেয়ে যদি কেউ নিজেকে সংযত রাখতে পারে তাহলে সুগার ফ্রি-র চেয়ে চিনি খাওয়াই শ্রেয়। পাশাপাশি কোনও আর্টিফিশিয়াল সুইটনার খেলে সারাদিনে ৩ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ন্যাচারাল সুইটচারের মধ্যে স্টিভিয়া অনেক কম ক্ষতিকর।
আদৌ কি খাওয়া ভাল
আসলে কৃত্রিম চিনি খেলে আমাদের ব্রেনে মিষ্টি খাওয়ার সাইকোলজিক্যাল সন্তুষ্টি হয় না। ফলে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। এতে ডায়াবেটিকেরা বেশি ক্যালোরি খেয়ে ফেলে, তাই আরও ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা স্বাভাবিক চিনির ক্ষেত্রে এতটা হয় না। একইসঙ্গে স্বাভাবিক চিনির থেকে কৃত্রিম চিনির হজম প্রক্রিয়াও আলাদা। ফলে ধীরে ধীরে রোগীর মেটাবলিক রেট কমে যায়। পরবর্তীকালে হজমের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, নার্ভের সমস্যা শুরু হতে পারে, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।