কুণাল ঘোষ, নয়াদিল্লি: দিল্লির বুকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে আবার ভরপুর প্রাসঙ্গিক তৃণমূল কংগ্রেস। আপাতত সব দলের কৌতূহলের কেন্দ্রে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি।
বাংলার নির্বাচনী ময়দানে বিজেপি ও বিরোধীদের হারানো; দিল্লিতে বিকল্প শক্তি ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকায় আলাদা নজর তৃণমূলের উপর ছিলই; কিন্তু এবারের এই দিল্লি অভিযান, সব কিছুকে ছাপিয়ে তৃণমূলকে এনে ফেলেছে শিরোনামে। আর গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে সত্যাগ্রহের সময় অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কর্মসূচির উপর বিজেপির পুলিশি অভিযান তৃণমূলের গুরুত্বকেই আরও উচ্চতা দিয়েছে। এর কিছু তাৎপর্য আছে।
এক) তৃণমূল মানেই গণআন্দোলন। বিরোধী রাজনীতির ঝাঁজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিকন্যা হয়েছেন এই বিরোধী রাজনীতি থেকেই। তৃণমূল দল হিসাবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এখন, শাসক দল হয়ে যাওয়ায় কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। মেদ বাড়ে। গত কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে তৃণমূল গা গরম করেছে; এবার দিল্লির কর্মসূচি তৃণমূলকে তার নিজের চেনা চেহারায় গণআন্দোলনে ফেরাবে।
[আরও পড়ুন: ‘রাজ্য সরকার তো চাকরি দিতে চায়’, নিয়োগ তদন্তে ‘ব্যর্থ’ সিবিআইকে বিঁধলেন অভিষেক]
দুই) তৃণমূল এই কেন্দ্রবিরোধী প্রতিবাদী আন্দোলনটা করছে দিল্লিতে, প্রতিপক্ষের মাঠে। সাহস, সাংগঠনিক দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস– সব দিক থেকেই এটা ইতিবাচক। এত বাধা অতিক্রম করে, রামলীলা ময়দান নাকচ, শেষে ট্রেন বাতিলে বাস, তবু কর্মসূচি হচ্ছে, বিজেপিকে পুলিশ নামিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে হচ্ছে, এটা বড় কথা।
তিন) আন্দোলনের ইস্যু– কেন্দ্রের বঞ্চনা। বিশেষত একশো দিনের কাজ এবং আবাসে। এটা বাংলার বড় ইস্যু। অভিষেক ধারাবাহিক প্রচারে বিষয়টা মানুষের মধ্যে নিয়ে গিয়েছেন।
ক’মাস আগের সমীক্ষায় ৯৫ শতাংশ মানুষ জানতেন না একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র দেয়। তারা বঞ্চনা করছে। এখন ৬৫ শতাংশ মানুষ জানেন এটা কেন্দ্রের বঞ্চনা। সংখ্যা আরও বাড়ছে। অর্থাৎ আন্দোলনের জন্য সঠিক ইস্যুটিকে সামনে রাখা হয়েছে। বিজেপির দু’দিকে বিপদ। টাকা ছাড়লে তৃণমূলের জয়। না ছাড়লে বিজেপি ভিলেন। এই চাপটা বিজেপি খেয়েছে বলেই তাদের নেতাদেরও দিল্লিতে এসে ভুলভাল বকে মুখরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করতে হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের ‘বঞ্চনা’ তোপ, পালটা ‘দুর্নীতি’ অস্ত্রে শান অনুরাগের]
বস্তুত, এখানে যা দেখছি, যা খবর পাচ্ছি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও তৃণমূলের দিল্লি অভিযানের দিকে সকৌতূহলে চেয়ে আছে। বিজেপি বুঝতে পারছে এর ছাপ পড়ছে। অন্যদিকে কংগ্রেস-সহ অ-বিজেপি দলগুলি দেখছে বিজেপির বিরোধিতাকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে রাজঘাটে পুলিশি হামলার পর তৃণমূলের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আকর্ষণ আরও বেড়ে গিয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। গোটা দলের সিনিয়র, জুনিয়র সবাই এক পরিবারের মতো রয়েছেন এখানে। অভিষেক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী পায়ে চোটের কারণে আসতে পারেননি। সব খবর রাখছেন। তিনি এলে এই কর্মসূচি আরেক মাত্রা পেত। কিন্তু গোটা দলটা যেভাবে এখানে একসুরে বাঁধা মসৃণভাবে চলছে, সেটাও দেখার মতো।
রাজঘাটে পুলিশি অভিযানের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম, বিজেপি, সমগোত্রীয় কিছু অর্বাচীনের উল্লাসের পোস্ট দেখলাম। এরা পাগল? পুলিশের এই বাড়াবাড়িতে যে অভিষেক ও তৃণমূলের কতবড় লাভ হল, এরা ভবিষ্যতে বুঝবে। তৃণমূল সব বাধা ভেঙে দিল্লিতে এসে রাজঘাটে পূর্বঘোষণামতো সত্যাগ্রহ করল, অহিংস আন্দোলন ভাঙতে পুলিশকে সহিংস হতে হল, মানুষ দেখলেন, এর প্রভাব বোঝার ক্ষমতা বাংলার ঈর্ষাকাতর বিরোধীদের নেই। মানুষ বুঝলেন তাঁদের হয়ে দিল্লিতে লড়াই করতে যায় তৃণমূল আর মারে বিজেপির পুলিশ। এখন দেখা যাক মঙ্গলবার কী হয়।