shono
Advertisement

যৌন সংসর্গ প্রমাণে স্ত্রী নয়, স্বামীকেই দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা

ভার্জিনিটি টেস্টের দাবি কুসংস্কার, অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার পরিচয়, বলল হাইকোর্ট। The post যৌন সংসর্গ প্রমাণে স্ত্রী নয়, স্বামীকেই দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:31 AM Sep 07, 2019Updated: 09:31 AM Sep 07, 2019

শুভঙ্কর বসু: পুরুষের যৌন সক্ষমতা বনাম নারীর সতীত্ব! পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বরাবর কার্যত গায়ের জোরেই প্রথমটির প্রমাণ দাখিল হয়েছে। বারবার নারীকেই পড়তে হয়েছে পরীক্ষার মুখে। বনবাস থেকে অযোধ্যায় ফেরার পর স্বয়ং সীতাকেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। দুহিতার সম্ভ্রম রক্ষায় শেষ পর্যন্ত ধরিত্রী সীতাকে টেনে নিয়েছিলেন নিজের কোলে। 

Advertisement

আধুনিক যুগেও বহু সীতার ভাগ্য একইভাবে বিড়ম্বিত হলেও অপমান মুখ বুঝেই সইতে হয়। তবে হুগলির চন্দননগরের বধূ মধুমিতার (নাম পরিবর্তিত) কাহিনি একটু ভিন্ন। স্বামীর চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়ানো এক বধূ এক্ষেত্রে পাশে পেয়েছেন আদালতকে। তাঁর পক্ষে রায় দিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মধুমিতার সঙ্গে দাম্পত্য যৌন সংসর্গ হয়েছে কি না তা প্রমাণের জন্য ওঁর শারীরিক পরীক্ষার (ভার্জিনিটি টেস্ট) দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, কুসংস্কার, অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার পরিচয়। বরং শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য স্বামীকেই শারীরিক পরীক্ষার প্রমাণ দাখিল করতে হবে।

[ আরও পড়ুন: শিক্ষক দিবসে স্কুল ও কলেজে চটুল নাচ, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে ]

২০০৬-এর শেষের দিকে চন্দননগরের সন্দীপ দাশগুপ্তর বিয়ে হয় মধুমিতার। মাসখানেক  পর থেকেই অজানা কোনও কারণে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ শুরু। ঠিক কী কারণে তাঁদের বনিবনা হচ্ছে না তা পরিজনদের কাছে সন্দীপ-মধুমিতা দু’জনেই খোলসা করেননি। দিনকে দিন তিক্ততা বাড়তে থাকে। এরপর ২০০৮-এর মাঝামাঝি সন্দীপের বিরুদ্ধে ‘গার্হস্থ্য হিংসা’র অভিযোগ এনে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ চান মধুমিতা। সন্দীপ সব কিছু অস্বীকার করেন। এবার দাম্পত্য বিবাদের প্রকৃত কারণ সামনে আসে। বিচ্ছেদ চাওয়ার কারণ হিসাবে মধুমিতা শেষপর্যন্ত আদালতে জানান, স্বামী পৌরুষহীন। সে কারণেই তিনি এই সম্পর্ক থেকে নিষ্কৃতি চান। অভিযোগ প্রমাণে স্বামীর শারীরিক পরীক্ষারও আবেদন জানান। বিচারক তা মেনে নেন। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন। 

এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি সন্দীপ। এ তো সরাসরি পৌরুষে আঘাত। তা তিনি মানবেন কেন? পৌরুষ প্রমাণের মরিয়া চেষ্টায় আদালতে পালটা স্ত্রীর ‘শারীরিক পরীক্ষার’ আবেদন জানিয়ে সন্দীপ বলেন, তিনি সক্ষম কি না তা স্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে। নিম্ন আদালতের বিচারক অবশ্য পত্রপাঠ সন্দীপের এই আবেদন খারিজ করে তাঁকে সত্বর মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।

শেষপর্যন্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির হন সন্দীপবাবু। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঠিক পরিকাঠামো না থাকায় সন্দীপকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে নির্ধারিত দিনে পুরুষত্ব পরীক্ষা দিতে হাজির হননি সন্দীপ। উলটে ফের আদালতের কাছে আরও সময় চান। বিচারক তাঁর আবেদন খারিজ করে আগের নির্দেশ বহাল রাখেন। হাল ছাড়েননি সন্দীপ। পুরুষত্বের এতবড় অপমানের বদলা নিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। শারীরিক পরীক্ষার জন্য সময় চাওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীর সতীত্ব পরীক্ষার আবেদন জানান। 

কিন্তু হাই কোর্টেও শেষরক্ষা হল না। বিচারপতি সইদুল্লা মুন্সি মামলার রায়ে জানিয়ে দেন, দাম্পত্যে যৌন সংসর্গ হয়েছে কি না তা প্রমাণের জন্য স্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষার ধারণা অযৌক্তিক নয়, কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞানতার পরিচয়। বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন তাঁকেই শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে। এজন্য শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মেডিক্যাল বোর্ড শারীরিক পরীক্ষার যে দিন নির্ধারিত করবে সেদিনই তাঁকে বোর্ডের সামনে উপস্থিত হতে হবে। 

The post যৌন সংসর্গ প্রমাণে স্ত্রী নয়, স্বামীকেই দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার