দিপালি সেন: উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর তৎকাল রিভিউ ও স্ক্রুটিনি করা হয়। তার পর সাধারণ রিভিউ, স্ক্রুটিনিতেও দেখা যায় নম্বর বেড়েছে বেশ কয়েকজনের। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, নম্বর বাড়ায় আরও ৩ জন স্থান অধিকার করে নিয়েছে মেধাতালিকায়।
গত ৮ মে চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সময় সেরা দশে ছিলেন ৫৮ জন। তৎকাল রিভিউ, স্ক্রুটিনির ফল প্রকাশের পর ১২ জনের অন্তর্ভুক্তিকরণে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৭০। নতুন করে আরও তিনজন যুক্ত হওয়ার পর এবার সেরা দশের চূড়ান্ত সংখ্যা ৭৩। সাধারণ রিভিউ, স্ক্রুটিনিতে আরও অনেক পরীক্ষার্থীর নম্বরে বদল এসেছে।
সংসদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ জনের কেউই প্রথমে মেধাতালিকায় স্থান পাননি। সেখান থেকে তাঁরা যথাক্রমে অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে উঠে এসেছেন। কোচবিহারের মাথাভাঙা হাইস্কুলের ছাত্র সোহম সাহা ৪৮২ নম্বর পেয়েছিলেন। সাত নম্বর বেড়ে বর্তমানে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। বর্ধিত এই নম্বরের হাত ধরেই মেধাতালিকায় একেবারে অষ্টম স্থান অধিকার করে নিয়েছেন সোহম। চার নম্বর বেড়েছে নবম স্থানে উঠে আসা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রাঞ্জন ঘোষের। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৪ থেকে বেড়ে ৪৮৮ হয়েছে। এক নম্বর বেড়ে দশম স্থান অধিকার করে নিয়েছেন মালদহের এ সি ইনস্টিটিউশনের সাত্যকী সিনহা। প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬ থেকে ৪৮৭ হয়েছে।
[আরও পড়ুন: উঠল নিষেধাজ্ঞা, ইলিশের খোঁজে সমুদ্রে পাড়ি মৎস্যজীবীরা]
এর বাইরে বহু পরীক্ষার্থীর নম্বর বদল হয়েছে সাধারণ রিভিউ, স্ক্রুটিনিতে। পরিসংখ্যান বলছে, মোট ২৬,৪৬৮ জন ছাত্রছাত্রী ৬১ হাজার ১৪৮টি বিষয়ের জন্য রিভিউ, স্ক্রুটিনির আবেদন জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে ১৩ হাজার ৫৮৯টি বিষয়ের নম্বর সংশোধন হয়েছে। সার্বিকভাবে তৎকাল ও সাধারণ মিলিয়ে রিভিউ, স্ক্রুটিনিতে নম্বর পরিবর্তনের সংখ্যা ভাবাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে। কারণ, সব মিলিয়ে ৮৩ হাজারের বেশি বিষয়ের আবেদনের ভিত্তিতে নম্বর সংশোধন হয়েছে প্রায় ১৯ হাজারের। সূত্রের খবর, বেশ কিছু বড় গলদও নজরে এসেছে সংসদের। যেমন, ৭০-এর মধ্যে ৬৩ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার নম্বর বদলে তিন হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই রিভিউয়ের পর তাঁর ৬০ নম্বর বেড়েছে। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে নম্বরের পারস্পরিক বদল হয়ে গিয়েছিল। যেমন, ৬২ উলটে হয়ে গিয়েছিল ২৬।
এই ধরনের ঘটনাগুলোকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “২-৩ নম্বর পরিবর্তন হতেই পারে। কিন্তু, কোনও কোনও বিষয়ে ৫০-৬০ নম্বর পর্যন্ত বেড়েছে। এগুলো সাংঘাতিক ঘটনা। প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষকদের দিক থেকে কিছু গাফিলতি নিশ্চয়ই থাকছে। আমরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করে এই ভুলটা কেন হচ্ছে, কোথা থেকে হচ্ছে, গোটা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখব। এবং যথোপযুক্ত সংশোধনীমূলক পদক্ষেপ নেব। কারণ, এত নম্বরের পরিবর্তনটা কখনওই বাঞ্ছনীয় নয়।”
প্রসঙ্গত, সংসদের নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান পরীক্ষকরা মূল্যায়নের নম্বর জমা দেওয়ার পর যদি কোনও পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরে অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তাহলে সেই অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন পাঠানো হয় প্রধান পরীক্ষকদের কাছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোনও পরীক্ষার্থী চারটে বিষয়ে ষাটের উপর নম্বর পেয়েছে। কিন্তু, একটি বিষয়ে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর খুবই কম। সেক্ষেত্রে পাঠানো হয় কোয়ারি। জানতে চাওয়া হয়, এই নম্বর সঠিক কি না। জানা গিয়েছে, ৬০ নম্বর বাড়ার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে কোয়ারিতেও ভুলটি ধরা যায়নি।