বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: রাজরোষে ধর্মগুরুরাও। বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধে মহন্তদের নজরবন্দি করল প্রশাসন। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার ৪৮ ঘণ্টা আগেই কার্যত গৃহবন্দি করা হল বিরোধীদের। আশ্রম ও আখড়ার প্রবেশ পথে বসল কড়া পুলিশি প্রহরা। বাইরের লোকের সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। আবার নিরাপত্তার নামে আজ থেকে কার্যত কারফিউ জারি করা হচ্ছে গোটা অযোধ্যায়। প্রশাসনের তরফে বিলি করা বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া অযোধ্যায় থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়ও নামানো হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাত ফুরোলেই রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় আচার পদ্ধতি ও পুজোপাঠ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে সংকল্প করবেন ধর্মগুরুরা। নতুন রামলালা এখন গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন। এবার পুরনো রামলালার পালা। জানা গিয়েছে, পুরনো মন্দির থেকে রামলালাকে নিয়ে ৫০০ মিটার দূরত্বের নতুন মন্দিরে স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পুরো পথ হেঁটেই পাড়ি দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী-সহ দেশ-বিদেশের হেভিওয়েট ভিআইপিদের পা পড়বে প্রাচীন এই জনপদে। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। নিজে অযোধ্যায় থেকে সরেজমিনে কাজ খতিয়ে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কোনও ত্রুটি রাখতে রাজি নন তিনি। কিন্তু বললেই কি তা সম্ভব! ত্রুটিমুক্ত অনুষ্ঠান করতে গিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের উপর নামিয়ে আনলেন রাজরোষ।
[আরও পড়ুন: রামের নিন্দা করতেই ভেঙে পড়ল মঞ্চ! প্রাক্তন সাংসদের দুর্ভোগের ভিডিও ভাইরাল]
দীর্ঘদিন ধরেই অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন হনুমানগঢ়ী মহন্ত প্রেমদাস, জ্ঞান দাস ও সঞ্জয় দাসরা। এদিন হনুমানগঢ়ীর পাশে তাঁদের আশ্রমে দেখা করতে গেলে পথ আটকায় পুলিশ বাহিনী। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মহন্ত জ্ঞানদাস অসুস্থ। ওষুধ খেয়ে ঘুমোচ্ছেন। কারও সঙ্গে দেখা করবেন না। হনুমানগঢ়ীর ভিতর থাকেন মহন্ত প্রেমদাস। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানেও পুলিশের বাধা। ওঁর অনেক বয়স হয়েছে। এখন নাকি কারও সঙ্গে দেখা করবেন না। মহন্ত সঞ্জয় দাসকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। করসেবকপুরমের নির্মোহী আখড়ার সামনেও কড়া পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। প্রবেশ পথের ধারেকাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না।
গোটা শহর পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। অযোধ্যা শহরে ৩০ লক্ষ মানুষ বাস করেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ সংখ্যালঘুর বাস। প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রায় ৫০ হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নতুন মন্দিরের আশপাশে বাস করতেন। আগেই অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিদের উপর কড়া নজর পুলিশের। অযোধ্যার একটি মাদ্রাসার প্রধান পারভেজ আহমেদ কাসমি বলেন, সব শান্তিতেই হচ্ছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তবে নরেন্দ্র মোদির আমলে অযোধ্যায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় অনেক মুসলমানই খুশি। মন্দিরে দর্শনার্থীদের আগমনের ফলে শহরটি অর্থনৈতিকভাবে সুফল পাবে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু সংখ্যালঘু এলাকায় এত আধা সামরিক বাহিনী কেন? পারভেজ জানান, তা প্রশাসনই বলতে পারবে। তবে বাইরে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে। ভয় তো থাকবেই। আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের ঘেরাটোপে মন্দির-মসজিদ মামলার মূল মামলাকারী ইকবাল আনসারির মহল্লা পাঞ্জি কোটিয়াতলা। ইকবাল ছাড়া এলাকার কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।
[আরও পড়ুন: রামের অযোধ্যায় হোটেল পাচ্ছেন না খোদ লক্ষ্মণ, ‘ক্ষুব্ধ’ সুনীল! মন্দির উদ্বোধনের আগেই ফিরতে হচ্ছে?]
অন্যদিকে, নিরাপত্তার নামে ‘বজ্র আঁটুনি’ অযোধ্যায়। শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া হাইওয়ে সিল করে দেওয়া হয়েছে শনিবার রাত থেকেই। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। আবার আজ থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া রাস্তায় বেরতে বারণ করা হয়েছে। অযোধ্যার বাসিন্দাদের সঙ্গে আধার কার্ড রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের কাছে সরকারি পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের শনিবার রাতের মধ্যে শহর ছাড়তে নির্দেশ জারি করেছে প্রশাসন। সাধু-সন্তদের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া ভাণ্ডারায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।