বাবুল হক, মালদহ: কতই না মহিমা ছিল সেই গাড়ির! সওয়ারি থাক বা না-থাক, তাতে কি? গাড়ি দেখলেই স্যালুট জানাতেন পুলিশ থেকে পথচারী, ছোট থেকে বড় সবাই। সময়ের সঙ্গে তা সঙ্গে তা অতীত হয়েছে। গণি খান চৌধুরীর (ABA Ghani Khan Choudhury) মৃত্যুর পর থেকে সেই গাড়ি আর বেরোয়নি। কিন্তু স্মৃতির পাতায় আজও অমলিন সেই গাড়ি।
কেউ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে প্রণাম ঠুকতেন। কোনও গ্রামে গাড়িটি ঢুকলেই মুহুর্তেই ছেঁকে ধরতেন আট থেকে আশি। গাড়ি ঘিরে ভিড় উপচে পড়ত। গণি খান চৌধুরীকে এক ঝলক দেখেই যেন শান্তি মিলত গ্রামের সাধারণ মানুষের। পুরনো সেই গল্প শোনালেন গাড়ির দ্বিতীয় চালক রাজু শেখ। প্রথম চালক গাজোলের বুদ্দিন শেখ প্রয়াত হয়েছেন। রাজু শোনালেন বহু পুরনো কথা। বলেন, "একদিন সাহেবের শরীর ভালো ছিল না। সামনেই ছিল ভোট। সাহেবকে কালিয়াচকের দিকে যেতে হত। বেলা গড়ানোর পর সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, 'তুই যা, গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে আয়।' আমি সেটাই করলাম। মানুষ বুঝেছিলেন, সাহেবই এলাকায় টহল দিয়ে ফিরে গেলেন।"
[আরও পড়ুন: মমতার উত্তরসূরি কি অভিষেক? মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো]
রাজুর কথায়, কখনও ভোট চাইতে হত না বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতাকে। গাড়িটি ঘুরলেই ভোট হয়ে যেত। আজ তিনি নেই। তবে তাঁর প্রয়াণের প্রায় দেড় যুগ পরেও কোতোয়ালি ভবনে রয়ে গিয়েছে সেই গাড়ি। যদিও ধুঁকছে অবহেলায়, অনাদরে। কিন্তু এখনও অক্ষত রয়েছে। আসলে, বিদেশি গাড়ি বলে কথা। ভারতীয় কারখানায় নয়, তৈরি সুইজারল্যান্ডে। টেকসই বটে। গণি খানের কোতোয়ালির প্রাসাদে গেলে দেখা যায়, মূল ফটক পেরিয়ে ভবনে ঢুকতেই বাম হাতের বারান্দায় গ্যারেজ ঘরে পড়ে রয়েছে লালবাতি লাগানো সুইজারল্যান্ড থেকে আসা সেই মার্সিডিজ। ধুলোয় ভর্তি কাঁচ। জরাজীর্ণ অবস্থা। রাজু শেখ বাইরে থেকে কাঁচের ধুলো সাফাই করছেন। রক্ষণাবেক্ষণ বলতে এইটুকুই। এই গাড়ি করেই এক সময় গোটা মালদহ জেলা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবিএ গনি খান চৌধুরী।
২০০৬ সালে কংগ্রেস নেতা প্রয়াত হন। তার পর ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তাঁর মার্সিডিজ গাড়িটি কোতোয়ালিতেই রয়েছে। এখনও কংগ্রেস কর্মী বা নেতৃত্বরা যখন কোতোয়ালি ভবনে যান তখন গাড়িটি দেখে যান। ধুলোমাখা অবস্থায় 'গণির প্রিয়' মার্সিডিজটি পড়ে থাকায় কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, গণির স্মৃতিবিজড়িত গাড়ি এবং সামগ্রী নিয়ে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা উচিত ছিল।