শম্পালী মৌলিক: তুমুল হইচই করছেন দেব, সঙ্গে নীল জল থেকে উঠে আসা বিকিনি-বেব। অতএব আর কী চাই! যুক্তিহীন পুজো-হুল্লোড়ের টিউন সেট করে দিল যেন ‘হইচই আনলিমিটেড’। কোনও গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে নয়, এক্কেবারে ফুরফুরে হাসির ছবি এটা। দেখার পর মনে হবে, সত্যিই অনেকদিন এমন অকারণে হাসিনি। ভাললাগার মতো কী আছে? বউ যখন দুষ্টু বরের পিছু নেয় তার আতঙ্ক যে চোর-পুলিশের ইঁদুরদৌড়ের শিহরনের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়-এ ছবি দেখলে আবার টের পাওয়া যাবে। যে সব বিবাহিত মানুষের এমন অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা তো রিলেট করতে পারবেনই, যাঁদের নেই তাঁরাও দমফাটা হাসির রোলার কোস্টার রাইডের মতো উপভোগ করবেন। চমৎকার কিছু সংলাপ আর উদ্ভট সিচুয়েশন চিত্রনাট্যে বুনে দিয়েছেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। হাসতে হাসতে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করার ভাবনাটাই কর্পূরের মতো উবে যায়।
[পর্দায় কতটা জীবন্ত ‘এক যে ছিল রাজা’-র ভাওয়াল সন্ন্যাসী?]
গল্পটা কেমন? ব্যক্তিজীবনে অসুখী চার পুরুষ ছবির মুখ্য চরিত্র। আর হ্যাঁ, তাদের বউরাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আছে তাদের জীবনে। সেই কারণেই তাদের জীবনে ভারী দুঃখ। সাদা বাংলায় বললে এদের জীবন সুখের নয়। একজন হল, এয়ারফোর্সের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট অনিমেষ চাকলাদার (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। অন্য তিনজন হল, ধনী ব্যবসায়ী কাজল সেনের (দুলাল লাহিড়ী) ঢপবাজ ঘরজামাই কুমার (দেব)। আর আছে গাড়ি মেকানিক আজম খান (অর্ণ মুখোপাধ্যায়) ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী বিজন চিরিমার (খরাজ মুখোপাধ্যায়)। চারজনের মধ্যে কুমার হল স্ট্রিট স্মার্ট এবং ব্লাফমাস্টার ধরনের। তবে মিথ্যে কথা বলে জীবনে ‘কেলো’ ডেকে আনতে তিনজনেই ওস্তাদ। ফলে খানিকটা আন্দাজ করাই যায় এদের বউদের জীবন কতটা দুর্বিষহ হতে পারে। অবশ্য কে কার জীবনে বেশি দুর্বিষহ সেটা ব্যক্তিগত বিচার! এহেন কুমারের লিগ্যাল ওয়াইফ অনিন্দিতা (কৌশানি মুখোপাধ্যায়)। এত বোকা একটি চরিত্র বাস্তবে থাকতে পারে ভাবাই যায় না। কিন্তু সিনেমায় থাকতেই পারে। অতএব দর্শক হেসে খুন। গাড়ি মেকানিক আজম-এর স্ত্রী উঠতি অভিনেত্রী। নাম তার শাবানা (রোজা পারমিতা দে)। ব্যবসায়ী বিজনের আবার দু’জন স্ত্রী। একজন বিজলি (কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়), অন্যজন সুমিত্রা (মানসী সিন্হা)। অ্যালকোহলিক বিজলি আর জাঁদরেল সুমিত্রা থাকে এ শহরেরই দুই প্রান্তে। তাদের সন্তানও আছে। জানা নেই কোন অসীম ক্ষমতায় বিজন এই সময়ে দাঁড়িয়েও দিব্যি দুই বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে! তা হোক দুই বউয়ের মাঝে পড়ে স্যান্ডুইচড বিজনকে দেখে হল-এ হাসির ছররা।
[পুজোয় ফিরল কিশোর আবেগের গপ্পো ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’]
আসলে মানুষ বোধহয় সব অসম্ভব সিনেমার পর্দায় সম্ভব দেখতে ভালবাসে আর খোঁজে রোজকার একঘেয়ে জীবন থেকে একটু মুক্তি। কুমার, আজম, বিজন, অনিমেষ সেই মুক্তি খুঁজছিল। কিন্তু পাকেচক্রে পেরে উঠছিল না। এক সময়ে হাইরাইজের ছাদে গিয়ে দেখা হয়ে যায় তাদের। বলা চলে ‘আত্মহত্যা-তুতো’ ভাই হয়ে যায় তারা পরস্পরের! এমন সংকটেই দেখা হয় বহুরূপী শীতল রায়ের সঙ্গে (রজতাভ দত্ত)। কখনও সে যাজক, কখনও ট্র্যাভেল এজেন্ট, কখনও বা গোয়েন্দা। এর মাধ্যমেই উজবেকিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনা করে ওরা, কিন্তু বউদের না জানিয়ে। কারণ তারা তো ‘লাইফ সার্ভিসিং’ করাতে যাচ্ছে। পরনারী অ্যালাউড হতে পারে, বউ নয়! জমে ওঠে বেড়ানোর স্বপ্ন। ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ অবস্থা-পরিকল্পনা-মাত্র মিথ্যের জাল বুনে ফেলল চারজনে। আর সামনে রইল উজবেক-সুন্দরী লোলার (পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়) হাতছানি। যে ঝরঝরে বাংলাও বলে। সুতরাং উড়ে গেল চারমূর্তি উজবেকিস্তান। চেনা পুলিশ থাকলেও অত জলদি পাসপোর্ট পাওয়া এবং পুরো ব্যবস্থা করে ফেলা অসম্ভব হলেও পর্দায় তো সবই সম্ভব! মাঝে অবশ্য অনিমেষের পেটুক পিসিমার (অনামিকা সাহা) এন্ট্রি আছে গল্পে। সে সব ছবিতেই দেখুন। কারণ পিসিমাকে এড়াতে গিয়েই কেলোর কীর্তিও ঘটাবে চারজনে। যাই হোক, এর মধ্যে ফ্লাইট হাইজ্যাক-এর ঘটনা ঘটে। যার সঙ্গে জড়িয়ে যায় এই চারজনের নাম। কেন? কীভাবে? হল-এ গিয়ে দেখাই ভাল। ঈশ্বরচন্দ্র বারিকের ক্যামেরায় উজবেকিস্তানের ভার্জিন লোকেশন মন টানবে দর্শকের। আর বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফি ও স্যাভির মিউজিকের সঙ্গে দেব-পূজা জুটির নাচ দেব-এর কমার্শিয়াল মশালা ছবির দর্শককে হল-এ টেনে আনবে। পূজাকেও খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছিল। অভিজিৎ, মিকা, আরমান মালিক, অমিত মিশ্র, নিকিতা গান্ধীর গান বেশ ফুট ট্যাপিং। বর-বউদের লুকোচুরি খেলাটা ভালই ফেঁদেছেন পরিচালক। সবটা লিখে ছবি দেখার মজা মাটি করব না। শেষের দিকের নাটকটা আরেকটু ছোট হলে ছবিটা আরও মুচমুচে হত।
[কেমন হল অস্কারে মনোনীত ছবি ‘ভিলেজ রকস্টার্স’?]
এবার আসি অভিনয়ের প্রসঙ্গে। দেব বাংলা উচ্চারণে আগের থেকে অনেক সাবলীল। তাঁকে কৌশানি এবং পূজা দু’জনের সঙ্গেই দারুণ মানিয়েছে। প্রযোজক-নায়ক হিসেবে সিরিয়াস ধারা ছেড়ে এই ছবিতে কমার্শিয়াল হিরো দেব ফেরত এলেন বলা চলে। আর প্রযোজক-পরিচালক এ ছবিতে অন্য যে ক’জন অভিনেতাদের বেছে নিয়েছেন, যেমন-শাশ্বত, রজতাভ, খরাজ, মানসী, কনীনিকা তাঁরা যে কতটা দক্ষ সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রত্যেকে তাঁদের অসাধারণ কমিক টাইমিংয়ের ছাপ রেখেছেন ছবিতে। নতুনদের মধ্যে ভালই করেছেন অর্ণ এবং রোজা। বলা যায় পুজো রিলিজের ভিড়ে দেব এবার স্ট্রেস ব্লাস্টার উপহার দিলেন।
The post কতটা ‘আনলিমিটেড’ ‘হইচই’ করলেন দেব? হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন appeared first on Sangbad Pratidin.