ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা নববর্ষে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া পুণ্যার্থীরা আটকে পড়তে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে। দুর্ভোগে পড়তে পারেন মা ভবতারিণীর পুজোর লাইনে দাঁড়িয়েও। কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) আসছেন ওই একই দিনে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে। তার আগের দিন সিউড়িতে জনসভাও আছে তাঁর। মঙ্গলবার যে কারণে মন্দির এবং সিউড়িতে তাঁর সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
কিন্তু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে (Dakshineswar) শাহের যাত্রার জেরে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এদিনই দুর্ভোগের আশঙ্কায় সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করতে আসছেন শাহ। ওই সময় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বেশি ভিড় থাকে। সেখানে যখন-তখন হাই-সিকিউরিটির মধ্যে থাকা কেউ যদি চলে যান, তখন তো সাধারণ মানুষের বিপদ।” কুণালের কথায়, “তাঁর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা লোক দেখানো বেশি। পুজো দেওয়ার হলে অন্য সময়ও এসে দিতে পারেন। তবে অনেক সময় মায়ের কাছে পুজোর ফুলও দিতে হয়। আবার বলির জন্য অন্য জিনিসও যায়!”
[আরও পড়ুন: আইসিকে ‘তুই’ বলে বিতর্কে সৌমিত্র খাঁ, বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদকে কড়া জবাব তৃণমূলের]
শাহের এই দু’দিনের বঙ্গ-সফর নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র আরও একটি বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছেন, সেটা হল রাজ্যের গণতন্ত্র। কুণালের কথায়, “দেশে গণতন্ত্র নেই, বাংলায় গণতন্ত্র আছে। ফলে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবেন, এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার। মনে করলে সভা করবেন।” এ প্রসঙ্গেই তৃণমূলের দাবি, এসব করেও শাহ বা গোটা বিজেপি দল রাজ্যে কিছু করতে পারবে না। কারণ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এসে বারবার শাহ দাবি করেছিলেন, ‘অব কি বার ২০০ পার’। কুণাল মনে করিয়ে দিয়েছেন, “তারপরও গোহারা হেরেছেন। এমন দিন গেছে, অমিত শাহের সামনে চেয়ার ভরতি হয়নি। অমিত শাহ আসছেন মানে তৃণমূল কর্মীরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে যে, পয়া লোক আসছে। এঁরা এলেই বাংলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন যে, এঁদের ভোট দেওয়া যায় না। যেখানে যেখানে শাহ ঘুরবেন, সেখানে সেখানে মানুষ আরও নির্দিষ্টভাবে তৃণমূলের দিকে আসবে।”
বাঙালি প্রীতি দেখাতে বিধানসভা ভোটের আগে রবীন্দ্রনাথের মতো জোব্বা পরে লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এবার শাহ আসছেন বাঙালি নববর্ষের শুরুতে, বাঙালির পার্বণে। সে প্রসঙ্গে কুণাল একটি প্রশ্ন রেখেছেন। বলেছেন, “বাংলার প্রতি যদি অত দরদ, বাংলায় নববর্ষে যদি আসতে হয়, তাহলে ২০১৪ থেকে ২০২৪ দশটা বছর চলে গেল। অথচ, বাংলা একটা ক্যাবিনেট বাঙালি মন্ত্রী পেল না। ইউপিএ জমানায় এ জিনিস ছিল না। বাংলাকে সম্মান, স্বীকৃতি দেওয়া হত। নববর্ষে যিনি বাংলা-বাঙালি দেখাতে আসছেন, তিনি বা মোদি কেন বাংলাকে একটা ক্যাবিনেট মন্ত্রী পাওয়ার যোগ্য মনে করলেন না?” এর মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার শাহকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন ‘আয়রনম্যান’ আসছেন বলে। কুণালের পালটা, “কীসের আয়রনম্যান? একুশে এসেও তো হেরেছেন। আর আমি মুখপাত্র হিসাবে প্রশ্ন করলে শুভেন্দু আমার জেলযাত্রার প্রসঙ্গ তোলে। আয়রনম্যান যে খুনের মামলায় আসামি হিসাবে জেলে ছিলেন, ওটা কী ছিল শুভেন্দু? জেল না তাজমহল?”