অর্ণব আইচ: ডেটিং অ্যাপ খুলে একের পর এক যুবককে ফাঁদে ফেলে আর্থিক প্রতারণা। চিত্রনাট্য অনুযায়ী অপারেশনের পরও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে এক মহিলা-সহ ৪। তারা সকলের যাদবপুর, বাঘাযতীন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এক যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক লক্ষ টাকা আদায়ের ছক ছিল ওই দলটির। কিন্তু টাকা আদায়ের আগেই পাটুলি থানার পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তড়িঘড়ি অভিযান চালিয়ে গোটা চক্রের পর্দা ফাঁস করে।
পাটুলির এলাকার অরবিন্দ নগরের বাসিন্দা এক যুবক স্নাতক হওয়ার পর চাকরির চেষ্টা করছিলেন। তার মাঝেই একটি ডেটিং অ্যাপে (Dating App) প্রোফাইল খোলেন তিনি। সেখান থেকে আলাপ হয় অনীশা দাস নামে বছর তেইশের তরুণীর সঙ্গে। এর পরই হানিট্র্যাপের (Honey Trap) কবলে পড়েন তিনি। পাশাপাশি আরও কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়। রবিবার ওই যুবককে গলফগ্রিনের একটি বাড়িতে ডাকা হয় ডেটিংয়ের জন্য। সেখানে গিয়ে অনীশা নামের মেয়েটির সঙ্গে একটি ঘরে যান তিনি। পুলিশকে দেওয়া যুবকের বয়ান অনুযায়ী, ঘরের দরজা বন্ধ করে তাঁরা ঘনিষ্ঠ হওয়ার পথে এগোতেই আচমকা দরজা ধাক্কা দেন কেউ। চমকে ওঠেন দুজনেই। মেয়েটি দরজা খুললে তার স্বামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এক পুরুষ!
[আরও পড়ুন: বিশ্বজয়ের পর ১২৫ কোটি টাকা ঘোষণা বিসিসিআইয়ের, কার কপালে জুটল কত?]
ছেলেটি ঘরে ঢুকে জানতে চায়, বসে থাকা ওই যুবক কে? এর পর তাঁকে মারধর করা শুরু হয় বলে অভিযোগ। শেষে তাঁকে আটকে রেখে এক লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। বলা হয়, ওটা অপহরণের মুক্তিপণ। যুবকের উপর চাপ শুরু হয়। এর পর যুবককে গলফগ্রিন (Golf Green)থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পাটুলির এক জায়গায়। তাঁর বাড়িতে যোগাযোগ করে গোটা বিষয়টি জানান। ফোনে 'অপহরণকারী'রা তাঁর পরিবারকে ফোনে বলে যে যুবকের বাইক নিয়েই তারা যাবে, যাতে চিনতে অসুবিধা না হয়। তাদের হাতেই যাতে মুক্তিপণের টাকা দেওয়া হয়। এভাবে নিজেদের জালে নিজেরাই জড়ায় ওই প্রতারক দল। এক লক্ষ টাকা না দিলে তাঁকে ছাড়বে না, এমনই জানানো হয় বাড়িতে।
সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সদস্যরা পাটুলি থানায় অভিযোগ জানান। এহেন খবর পেয়ে পুলিশও প্রাথমিকভাবে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করে। যুবকের পরিবারকে পুলিশের তরফে বলা হয়, অপহরণকারীদের (Kidnapper) সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে। তার মাঝে পুলিশ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে অপহরণকারীদের নাগালে পাওয়ার চেষ্টা করছে।
[আরও পড়ুন: বহাল CBI, সন্দেশখালি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে খারিজ রাজ্যের আর্জি]
এর পর মোটরবাইকের নম্বর-সহ নানা সূত্র ধরে যাদবপুর, বাঘাযতীন এলাকার কয়েকজনের খোঁজ পায় পাটুলি (Patuli) থানার পুলিশ। হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় সৈকত পাল, বাবুসোনা মণ্ডল, পিটার ডি ক্রুজ, অনীশা দাসকে। এরা সকলে পূর্ব পুটিয়ারি, আজাদগড়ের বাসিন্দা বলে পুলিশ জানতে পারে। উদ্ধার করা হয় অরবিন্দ নগরের ওই যুবককে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই দলটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে এভাবেই প্রতারণার (Fraud) ফাঁদ পেতেছিল। এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অনীশা ও আরেকজন স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় থাকত। তবে পুলিশের সক্রিয়তায় গোটা চক্রের পর্দা ফাঁস হয়ে গেল।