সুমন করাতি, হুগলি: মাটির ঘর। টিনের ছাউনি। ঘরে ঢুকতে গেলে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়। গ্রামের ছোট মুদিখানা দোকানই প্রধান আয়ের উৎস। অনটন প্রতিদিনের সঙ্গী। তবে চোখে অমলিন স্বপ্ন। সেই জেদেই অমিতাভ বচ্চনের কন বানেগা ক্রোড়পতি রিয়ালিটি শো এর মঞ্চে পৌঁছলেন হুগলির জয়ন্ত দুলে। শুধু নিজের স্বপ্নপূরণ নয়। জাতীয় স্তরের জনপ্রিয় শোয়ে তুলে ধরলেন গ্রামের ও পরিবারের দুরাবস্থার কথা। সমস্যার কথা শুনে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা দিয়েছেন বিগ বি। সঙ্গে তিনি জিতেছেন ১২ লক্ষের বেশি টাকা
আরামবাগ মহকুমার গোঘাটের বেঙ্গাই অঞ্চলের বাসিন্দা জয়ন্ত। মা ,বাবা ,বোনকে নিয়ে থাকেন তিনি। ছোট থেকে মেধাবী বলে পরিচিত জয়ন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই সে এই রিয়ালিটি শো অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। দীর্ঘ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে নিজেকে তৈরি করেন তিনি। অবশেষে পৌঁছন স্বপ্নের মঞ্চে। একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে জেতেন ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
[আরও পড়ুন: লক্ষ্য দুষ্কৃতী তৈরি! চুরি, ডাকাতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই স্কুলে]
এছাড়া সেই মঞ্চেই তুলে ধরেন গ্রামের দুরাবস্থার কথা। জানান পুকুরের জল ব্যবহার করে গ্রামের মানুষেরা। শৌচালয় থাকলেও এখনও গ্রামের বহু মানুষ অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেননি। নিজের পরিবারের ক্ষেত্রেও দেখেন তাঁর মা ও বোন বাড়ির পাশে পুকুরেই স্নান করছেন। আরও জানান, যে পুকুরে , গরু, হাঁস ও বিভিন্ন পশু স্নান করানো হয় সেই পুকুরেই মানুষ স্নান করছে। তাই কেবিসির মঞ্চ থেকে জয়ন্ত গ্রামের মানুষদের বার্তা দেয় স্নানাগার ব্যবহার করার জন্য। জয়ন্ত নিজের পরিবারেরও কথা তুলে ধরেন। জানান, তাঁর বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে, কিন্তু কোনও স্নানাগার নেই। ফলে মা-বোন ও পুকুরেই সকলের সামনেই স্নান করে। সেই কথা শুনে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন তাঁর বাড়ির স্নানাগার তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পড়ান। জয়ন্ত বলেন, "ছোট থেকেই আমার কেসিবিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি তার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল এই রকম মঞ্চ পেলে সেখানে আমার গ্রামের সমস্যার কথা তুলে ধরব। গ্রামবাসীদের সচেতনতার অভাব রয়েছে তা বলার চেষ্টা করেছি। গ্রামের সম্যাসার পাশাপাশি পরিবারের স্নানাগার নেই তাও বলেছি। তা শুনে অমিতাভ স্যার বলেছেন আমি টাকা জিতি বা না জিতি তিনি বাড়িতে স্নানাগার তৈরি করে দেবেন।" এত কষ্টের মধ্যে গ্রামের ছেলে কেসিবির মঞ্চে পৌঁছিয়ে যাওয়ায় খুশি গ্রামের বাসিন্দারাও।