সুমন করাতি, হুগলি: ‘ডিপফেকে’র (Deep fake) ফাঁদে সর্বস্বান্ত তরুণী! প্রথমে ফ্ল্যাশ মেসেজের মাধ্যমে মোবাইল ক্লোনিং। তার পর সুপার ইমপোজ করা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আত্মীয়দের পাঠানোর ভয় দেখিয়ে তরুণীর থেকে হাজার হাজার টাকা হাতায় সাইবার অপরাধীরা। শেষমেশ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন হুগলির মানকুণ্ডুর তরুণী। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
তরুণীর সহকর্মী জানিয়েছেন, “১৯ তারিখ আমার বন্ধু মোবাইলে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখছিল। হঠাৎই একটা ফ্ল্যাশ মেসেজ ভেসে ওঠে ওর ফোনে। সেটা খুলতেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড হয়ে যায়। তার পর ‘অ্যাকসেস নোটিফিকেশন’ আসে। আমার বন্ধু সেখানে মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ওঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১১ হাজার টাকা পাঠানো হয়। তবে লোন হিসাবে। ও অবাক হয়েছিল।” এর পর শুরু হয় সাইবার প্রতারকদের খেলা। বার বার বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসতে শুরু করে। টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে ‘ডিপফেক’ করা অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তরুণীর ফোনের কনট্যাক্ট লিস্টে থাকা বেশ কয়েকজনকে ডিপফেক ছবিও পাঠায় প্রতারকেরা। সম্মানহানির ভয়ে ১৯ হাজার টাকা অনলাইন পেমেন্ট করেন তিনি। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। তরুণী যে প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন তা তারা ভালোই বুঝে ছিল। অশ্লীল ছবি পাঠানোর ভয় দেখিয়ে আরও টাকা দেওয়ার চাপ দিতে থাকে তারা। এর পরই ঘনিষ্ঠ মহলে পুরো বিষয়টি জানান তরুণী। শুক্রবার ভদ্রেশ্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানা চুঁচুড়ায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: সুরাতেই লক্ষ্মীলাভ! কালীপুজো-দিওয়ালিতে কত টাকার মদ বেচল রাজ্য?]
কী এই ডিপফেক প্রযুক্তি? এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজনের শরীরে অন্যের মুখ বসিয়ে দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবি বা ভিডিও। পুলিশ জানাচ্ছে, ফ্ল্যাশ মেসেজের মাধ্যমে ফোন ক্লোনিং অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে হ্যাকাররা প্রতারণার জাত পাতছেন। ভয় দেখাতে ডিপফেক প্রযুক্তিও হাতিয়ার করছে তারা। সম্মানহানির ভয়ে অনেকেই ওই প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
কীভাবে এড়াবেন এই বিপদ? চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সাবধান হতে হবে। এই রকম ফোন কিংবা মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গে তা ‘ব্লক’ করতে হবে। আর মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ফ্ল্যাশ মেসেজ পাত্তা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করলে, সেখানে যতটা সম্ভব কম ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যায়, ততই ভাল।’’