বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, ভোপাল: ‘অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া’! বা ‘ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর’।
সংলাপগুলো শুনলেই মনে ভিড় করে বেশ কিছু রোমাঞ্চকর নাম। জয়, বীরু, গব্বর সিং, শামহা, কালিয়া, বাসন্তী…। সেই দেহাতি গ্রাম রামপুরের পটভূমিকায় তৈরি সাতের দশকের মেগা ব্লক ব্লাস্টার ‘শোলে’। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে প্রথম যে মাল্টি স্টার মুভি রাতারাতি আমূল পালটে দিয়েছিল বলিউডের চলন-বলনকে।
১৯৭৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পেয়েছিল রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’। সে ছবির প্রভাব ভারতীয় জনমানসে অর্ধশতাব্দী পরও যে কতটা অটুট, তার প্রমাণ এবারের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। হিন্দি বলয়ের অন্যতম হাই ভোল্টেজ যে ভোটযুদ্ধে কী শাসক, কী বিরোধী–দু’পক্ষের গলাতেই জনগণেশের মন জয়ে অহরহ শোনা যাচ্ছে গব্বর সিং, জয়-বীরু, ঠাকুর বলদেব সিংয়ের ডায়লগ।
[আরও পড়ুন: রাতের দিকে সোনার ব্যাটে বিরাট বরণ, জন্মদিনে কোহলিকে বিশেষ উপহার দিল সিএবি]
বিধানসভা ভোটের তেতে ওঠা মঞ্চে ‘শোলে’ ছবির সংলাপকে প্রথম এনেছেন কংগ্রেসের (Congress) মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কমলনাথ (Kamal Nath)। রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই এবারের নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বইছে প্রায় টানা ১৫ বছর (মাঝের ক’বছর ছাড়া) বিজেপি (BJP) শাসিত মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh)। গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সেই হাওয়াকে ‘ঝড়’ হয়ে ওঠার রসদ জোগাচ্ছে। অবস্থা সামাল দিতে বিরোধী কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবির। জবাবে শোলে ছবিকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন মধ্যপ্রদেশ রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের চৌকস খেলোয়াড় কমলনাথ।
মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস মূলত দুই মেরুতে বিভক্ত। একদিকের নেতা দ্বিগ্বিজয় সিং। অন্যদিকের নেতা কমলনাথ। নিজেদের বিপক্ষে বওয়া হাওয়াকে পক্ষে আনতে দুই সর্বভারতীয় নেতার মধ্যে বিরোধকে উসকে দিয়ে আক্রমণ শানাননোর কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। আর সেই আক্রমণকে পাল্টা দিতে কমলনাথ রাজ্যজুড়ে জনসভা করে বলতে শুরু করেছেন, তিনি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় আদতে ‘শোলে’ ছবির সেই অটুট জয় ও বীরু জুটি। যে জুটি আমৃত্যু থাকবে। ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য গব্বরকে খতম করা,’ ঘোষণা করছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগর-করিমপুর প্রস্তাবিত রেলপথের জমি চেয়ে চিঠি রেলের]
কমলনাথের ‘গব্বর সিং’ যে আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi), তা অবশ্য বলার অপেক্ষা থাকে না। বিপাকে পড়ে পালটা তোপ দেগেছেন মারাঠা পেশোয়া বাজিরাওয়ের প্রধান সেনাপতি রণোজি সিন্ধিয়ার উত্তরসূরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁর কটাক্ষ, কংগ্রেস নেতার বুক চাপড়ে বলা ‘জয়’ আর ‘বীরু’ তো আসলে ‘শোলে’র প্রথম জীবনে চুরি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া জেলখাটা আসামি। মধ্যপ্রদেশে এই দু’জন চোর বলেই পরিচিত। ক্ষমতায় থাকাকালীন জয়-বীরু জুটি জনগণের অর্থ লুঠ করেছে। কমলনাথের ‘জয়-বীরু’ জুটি নিয়ে তোপ দেগেছেন আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডিমনি কেন্দ্রের প্রার্থী নরেন্দ্র সিং তোমরও। তিনি বলছেন, “আরে! এই জয় ও বীরু জুটি ভোটের আগে লোক দেখাতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। অথচ আমার ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের জয়-বীরু জুটি দীর্ঘদিনের।” পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেবওয়ালা। তাঁর কটাক্ষ, এঁরা গব্বর বাহিনীর দুই নাম করা ডাকাত কালিয়া ও শামহা। গব্বর থাকেন দিল্লিতে।
রামপুরের মানুষের রক্ষাকবচ হিসেবে জয় ও বীরুকে নিয়ে আসেন ‘ঠাকুরসাব’। জয়ের প্রাণের বিনিময়ে রামপুর রক্ষা করেছিলেন তিনি। শোলের রামপুর মধ্যপ্রদেশে শেষ পর্যন্ত কার জয় নিশ্চিত হয়, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।